আগরতলা, ৮ জুন : উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর মহকুমার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত বুংনাং আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই কেন্দ্রের অক্লান্ত পরিশ্রমী চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. মানিক সাহার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সকলের কাছে সহজলভ্য ও আধুনিক করার দৃষ্টিভঙ্গি এই কেন্দ্রের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান মেনে স্বাস্থ্য পরিষেবার মানোন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছেন বুংনাং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. অর্ণব দাস ও তার দল। তাদের এই প্রয়াস জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতীয় কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স স্ট্যান্ডার্ডস (এনকিউএএস) কমিটির কঠোর মূল্যায়নে এই কেন্দ্র ১০০-র মধ্যে ৯৩ নম্বর অর্জন করেছে, যা ত্রিপুরার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি বিরল কৃতিত্ব। এই মূল্যায়নে পরিচ্ছন্নতা, অবকাঠামো, রোগীদের প্রতি স্বাস্থ্যকর্মীদের আচরণ এবং চিকিৎসা পরিষেবার মান বিবেচনা করা হয়। এনকিউএএস-এর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সার্ভেতে এই ফলাফলের জন্য ত্রিপুরা সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের পক্ষ থেকে আগরতলায় বুংনাং কেন্দ্রের দলকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়েছে।
বুংনাং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাফল্য শুধু এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা অন্ত্যোদয় ও বিপিএল পরিবারের হওয়ায়, তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান কার্ড এবং মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার সুবিধা সর্বাধিক পরিমাণে প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া, এপিএল ও বিপিএল সকলের জন্য বিনামূল্যে রেবিস ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে। ক্যান্সার রোগীদের সহায়তা, মাতৃ ও শিশু কল্যাণ এবং টিবি-মুক্ত ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে এই কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতিমধ্যে এই কেন্দ্রের অধীন কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত সম্পূর্ণ টিবি-মুক্ত হয়েছে।
প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন রোগী এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। গত বছর ১২০০-র বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, গত এক বছরে ৫৭টি নরমাল ডেলিভারি এই কেন্দ্রে সম্পন্ন হয়েছে, যা আধুনিক সময়ে সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রবণতার মধ্যেও একটি প্রশংসনীয় কৃতিত্ব। রোগীরা জানিয়েছেন, ডা. অর্ণব দাস এবং তার দলের সদয় আচরণ ও পেশাদারিত্ব তাদের মন জয় করেছে।
এই কেন্দ্রের সাফল্য ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিষ্ঠার সমন্বয়ে বুংনাং আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির প্রমাণ করেছে যে, দৃঢ় সংকল্প ও দলগত প্রচেষ্টায় যেকোনো চ্যালেঞ্জ জয় করা সম্ভব।
0 মন্তব্যসমূহ