আগরতলা, ১৮ জুন : বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান যার মুখ্য উদ্দেশ্য আগামী খারিফ মরশুমে দেশে খাদ্য শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। ২৯ শুরু হয়ে গত ১২ জুন সমস্ত ভারতবর্ষের সাথে রাজ্যের অন্নদাতাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে অত্যন্ত সাফল ভাবে সমাপ্তি হয়েছে। ভারতের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী অবতার পুরুষ নরেন্দ্র মোদির দিকনির্দেশনা ও ভারতের কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান'র নেতৃত্বে সর্ব ভারতে এবং আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা এবং কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ দিক নির্দেশনায় রাজ্য জুড়ে বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গত ২৯ মে শচীন দেববর্মা কমিউনিটি হলে এই অভিযানের শুভারম্ভ করেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা মানিক সাহা এবং ঐ দিন মুখ্যমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রী সবুজ পতাকা দেখিয়ে কিষান রথ যাত্রার উদ্বোধন করেন। বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান কিষান মোর্চার সভাপতি প্রদীপ বরণ রায়। সেদিন রাজধানী আগরতলার প্রদেশ বিজেপি ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
আরো বলেন, এই ২৪ টি রথ তিন টি করে প্রতি জেলায় ভ্রমণ করেছে এবং এই কিষান রথ গুলোতে গত ১১ বছর ধরে কৃষিতে ভারতের অভূতপূর্ব সাফল্য এবং গত সাত বছর ধরে ত্রিপুরার কৃষি উন্নতির গাথা তুলে ধরা হয়েছে। ত্রিপুরায় মোট ৮৬৪ টি গ্রামে কৃষক সমাবেশ ও সর্বমোট ১ লক্ষ ৭২ হাজার কৃষক কে যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ৯৫৬টি গ্রাম এই অভিযানের সাথে যুক্ত হয়েছে ও ৮৭৩ টি কৃষক বার্তালাপ সভা করা হয়েছে এবং বার্তালাপ সভায় উপস্থিত ছিলেন ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ২৬৩ জন কৃষক ভাই বোন যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। প্রকৃতপক্ষে এই সমাবেশ গুলোতে উপস্থিত ছিলেন তিন লক্ষেরও বেশি কৃষক। একটি বিজ্ঞানী দল প্রতিদিন তিনটি করে সভা করেছেন এবং প্রতিটি সভা ছিল দুই ঘন্টা, তাই উপস্থিত সকল কৃষকের নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব ছিল না। এই সমাবেশগুলো ছিল বিজ্ঞানী এবং কৃষকদের মধ্যে সরাসরি বার্তালাপ। আটটি জেলায় তিনটি করে বিজ্ঞানী দল প্রতিদিন ২৪ টি করে মতবিনিময় সভা করেছেন এবং প্রতি জেলায় ১০৮ টি করে সভার পরিকল্পনা রাখা হয়েছিল। অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে ১২ দিনব্যাপী এই মত বিনিময় সভা গুলো হয়েছে। কৃষি দপ্তর, পশুপালন দপ্তর ও মৎস্য দপ্তরের বরিষ্ট আধিকারিক, আই সি এ আর এর বিজ্ঞানী গণ, কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞগণ এই অভিযানের সাথে যুক্ত ছিলেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য্যর নির্দেশক্রমে বিজেপি কিষান মোর্চা, রাজ্য জেলা এবং মন্ডলের সমস্ত কার্যকর্তা গনকে নিয়ে এই বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযানকে সাফল্যমন্ডিত করার লক্ষ্যে রাজ্যব্যাপী প্রয়াস চালিয়ে গেছে। এই অভিযানে মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের প্রত্যেক মন্ত্রী এক বা একাধিক সভায় উপস্থিত ছিলেন। বিধায়ক বিধায়িকা এমডিসি জেলা পরিষদের সভাপতিগণ জেলা পরিষদ মেম্বারগণ পঞ্চায়েত সমিতি চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান মেম্বার গ্রাম প্রধান সহ প্রায় সকল জনপ্রতিনিধন সামিল হয়েছেন। সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য্য ওনার ব্যস্ততম কর্মসূচির মধ্যেও তিনটি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত কৃষি বিজ্ঞানীগণকে সামনে রেখে তিনি কৃষকদেরর সাথে মতবিনিময় করেছেন।
গত সাত বছরে ত্রিপুরা কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আমাদের রাজ্য খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সিপাহীজলা জেলা দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা ও গোমতী জেলা খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে গেছে। সিপাহীজলা ধান মৎস্য এবং দুগ্ধ উৎপাদনে সব জেলা থেকে এগিয়ে রয়েছে, তারপর রয়েছে দক্ষিণ জেলা গোমতী জেলা খোয়াই জেলা ধলাই জেলা ঊনকোটি জেলা উত্তর ত্রিপুরা জেলা এবং সবশেষে পশ্চিম জেলা রয়েছে। আগামী দু বছরের মধ্যে খোয়াই জেলা ও ধলাই জেলা ধান উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে বলে আমরা আশা রাখি। সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার সুফল হিসাবে এরই মধ্যে আগরতলা রানীর খামারে এক লক্ষেরও বেশি মুরগি নিয়ে পোল্ট্রি ফার্ম হয়েছে যা প্রতিদিন ৮০ হাজারেরও বেশি ডিম উৎপাদন করে। সাক্রম এবং ধর্মনগরের যুবরাজ নগরে এক হাজারের ও বেশি শুকর বিশিষ্ট ফার্ম গড়ে উঠেছে। দুধ ও মৎস্য উৎপাদনে ত্রিপুরা এগিয়ে যাচ্ছে।
বিজেপি সরকারের কৃষক দরদী পরিকল্পনা এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়নে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে এই রাজ্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা সংবাদপত্রে লক্ষ্য করেছি অবসাদগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাগণ বলছেন পাম ওয়েল চাষ করলে রাজ্যের মাটি নষ্ট হয়ে যাবে, পামওয়েল উৎপাদন লাভজনক নয়। উনারা যখন কম্পিউটার এসেছিল তখন কম্পিউটারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। উনারা বলেছিলেন কম্পিউটার যুক্ত হলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে, আজ দেখা যাচ্ছে ভারতের সবচাইতে বেশি যুবক যুবতী কম্পিউটারের মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থান করছেন। উনাদের পামওয়েল নিয়ে বক্তব্য বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং বিজেপি কিষান মোর্চা এই অভিযোগ খন্ডন করে। উনারা বিজ্ঞানী নন, পামওয়েল সম্বন্ধে উক্তি করার আগে বিজ্ঞান জেনে নিতে হবে। উনারা বলেছেন কৃষি যন্ত্রপাতি ও বীজ নিয়ে দলবাজি হচ্ছে- আমরা ভুলে যাইনি গত ৩৫ বৎসরের দলবাজির বিভৎস রূপ। এমন অভিযোগ আনলে নাম ঠিকানা সহ বলতে হবে, মিথ্যা বলার কোন যুক্তি নেই, এই সরকার কোন প্রকার দলবাজি করে না। বর্তমান সরকারের আমলে রাজ্যের কৃষকগণ সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছেন এখন কৃষককে ক্ষেতমজুর বলা হয় না, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কৃষককে কখনো কৃষক বলেননি- বলেছেন অন্নদাতা। আমাদের রাজ্যের মাননীয় কৃষিমন্ত্রী যিনি রাজ্যের সবচেয়ে প্রবীণ মন্ত্রী কৃষকের পা ছুয়ে প্রণাম করেন। আমাদের বিজেপি প্রদেশ সভাপতি তথা মাননীয় সাংসদ কৃষকগণকে প্রণাম জানিয়ে বুকে জড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। আমরা কিষান মোর্চা রাজ্য জুড়ে কৃষক সম্মাননা কার্যক্রম চালিয়ে কৃষকের পা ধুয়ে প্রণাম করে উনাদেরকে সম্মান দিয়েছি যা বিগত ৩৫ বছরে কখনো লক্ষ্য করা যায়নি। বিগত বিধ্বংসী বন্যার সময় জন বিচ্ছিন্ন এই নেতাগণ কোথায় ছিলেন? উনাদেরকে তো কৃষকের পাশে একবারের জন্য ও দেখা যায়নি। আগরতলা শীত তাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে রাজ্যের কৃষকের জন্য অবসাদগ্রস্ত নেতাদের এই মায়া কান্না এবং সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোকে বিজেপি কিষান মোর্চা তীব্র ধিক্কার জানায়।
সংকল্প থেকে সিদ্ধি, গরিব কল্যাণ ও সুশাসনের অমৃতকাল। বিজেপি রাষ্ট্রীয় সভাপতি মাননীয় জেপি নাড্ডাজির নির্দেশক্রমে কিষান মোর্চা ২৩ শে জুন ভারত কেশরী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বলিদান দিবস থেকে ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত দেশব্যাপী প্রতি গ্রামে দশটি করে বৃক্ষরোপণ করবে। বিজেপি কিষাণ মোর্চা ত্রিপুরা প্রদেশ এই বৃক্ষরোপণ উৎসব রাজ্যব্যাপী পালন করবে বলেও জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ