Advertisement

Responsive Advertisement

নববর্ষ বাঙালির এক অনন্য উৎসব

                                ড. হৈমন্তী ভট্টাচার্জী

বাঙালীজাতির জন্য বাংলা নববর্ষ উদযাপন একটি ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিত। এই দিনটি বাঙালী সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িত। নববর্ষের দিনটি পুরাতন বছরের বিদায়ের ঘন্টা এবং নতুন বছরের আগমনের বার্তা দেয়। এ দিনটিতে বিগত বৎসরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হতাশা-নিরাশাকে বিলীন করে এবং অনিশ্চিত সম্ভাবনার আশাকে স্বাগত জানিয়ে শুরু হয় নতুন বছরের পথচলা। বাঙালী কৃষ্টির অংশ হিসাবে এই দিনকে উপলক্ষ করে হাটে-মাঠে-প্রান্তরে, গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে বর্ণিল আয়োজনে মুখরিত এক পরিবেশ ধারন করে।
 পহেলা বৈশাখ ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাংলার সব মানুষের প্রাণের উৎসব। দিন দিন পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদযাপন একটি সর্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
বাংলা নববর্ষ কখন শুরু হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট ইতিহাস নেই।
বহুকাল পূর্বে নববর্ষ বা বাংলা বর্ষের প্রথম দিনটি পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। আর এই আর্তব উৎসবের সাথে কৃষির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর এবং আর্তব উৎসবটিও ঋতুধর্মী উৎসব। 
১৬ শতকের দিকে বাংলার ক্ষমতাশালী মুগল সম্রাট ‘আকবর’- বাংলা সন প্রবর্তন করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত তালুকদার, জমিদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীদের খাজনা পরিশোধ করতেন। এবং পরদিন নববর্ষে ভূস্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো। ক্রমান্বয়ে এই দিনটি মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সাথে জড়িয়ে আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে ওঠে।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতদের অধিকাংশের মতে আকবর হলেন বাংলা সালের প্রবর্তক।
মূলত কৃষিকাজের সুবিধার্থেই মুগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০/১১ মার্চ বাংলা সন চালু করেন। 
বাংলা নববর্ষ উদযাপন এদেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য। পহেলা বৈশাখ উৎসবের মধ্য দিয়ে এ ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে দেশের মানুষ।পহেলা বৈশাখের উৎসব শুরুতে ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। গ্রামের মেলা, খেলা ও নাচ-গান ছিল প্রধান আকর্ষণ। দিন দিন তা শহর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বৈশাখের সংস্কৃতি আমাদের জীবন-সাহিত্য ও বাঙালি জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় গণমুখী উৎসব। বাঙালির ঐতিহ্যের শিকড়ে প্রোথিত বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব অপরিসীম মহিমায় উজ্জ্বল। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাংলা নববর্ষই দেশের সর্বজনীন বড় উৎসব।সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানকে আখ্যায়িত করতে পারি, পৃথিবীর এক বিরল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সেক্যুলার উৎসব হিসেবে।বাংলার কত রূপ যে আছে, যে রূপের তালাশ করে ফিরেছেন রবীন্দ্রনাথ নজরুল, জীবনানন্দ। সেই রূপের সকল আধার যেন হাজির হয় বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখের উৎসবে। 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর'। জীবনানন্দ দাশের অমোঘ এই উচ্চারণের সত্যতা কেবল বাংলার প্রকৃতিতে মেলে না, তার উৎসব-পার্বণেও হাজির হয়।একটা উৎসব কীভাবে সর্বজনীন হয়ে উঠে। কীভাবে তার প্রসার ও পসার ঘটতে পারে, তার নজির রয়েছে বাঙ্গালির পহেলা বৈশাখের উৎসবে। পৃথিবীতে একটা উৎসবের এরকম ব্যাপকতা বিস্তার গ্রহণযোগ্যতা ও মান্যতা বোধ হয় দ্বিতীয়টি নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ