Advertisement

Responsive Advertisement

আলুর দানাবীজ থেকে আলু চাষের পদ্ধতি

সাধারণত আলু চাষের জন্য আমাদের চাষীভাইরা বীজ হিসেবে আলুই ব্যবহার করে থাকেন। আলু চাষের মোট খরচের প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশী খরচ করতে হয় শুধুমাত্র এই বীজ-আলুর জন্য। বীজ-আলুর উৎপাদন ও সংরক্ষণ অথবা বাইরে থেকে সংগ্রহ ও তার পরিবহণ একটি পরিশ্রম ও ব্যায়-সাপেক্ষ ব্যাপার। আলুর উৎপাদন কম হওয়ার একটি মূল কারণ হচ্ছে চাষে নিম্নমানের বীজ আলুর ব্যবহার। আলুচাষে আলুর দানা-বীজের ব্যবহার এই সব অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

আলুর দানা-বীজের ব্যবহারের বিশেষ সুবিধাগুলো হচ্ছেঃ
১) বীজের খরচ বাঁচানো: যেখানে কানি প্রতি প্রায় ৮,০০০-১০,০০০ টাকা মূল্যের ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি বীজ আলুর দরকার হয়, সেখানে আলুর দানা বীজের প্রয়োজন হবে মাত্র ১৬ গ্রাম, যার দাম মাত্র ৩২০ টাকা।
২) বীজ-আলুর মাধ্যমে যে সব রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে, দানা বাজের মাধ্যমে সে সব রোগ ছড়ানোর কোন সম্ভাবনা নেই।
৩) আলুর দানা-বীজ, শংকর বীজ হওয়ায় উচ্চ ফলনশীল।
৪) আলুর দানা-বীজের সংরক্ষণ খুবই সহজ এবং অনেক দিন ধরেই তা সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা যায়।
৫) বীজ আলুর মতো দানা বীজের কোন পরিবহণ খরচ লাগে না।
৬) যেহেতু কানি প্রতি উৎপাদন খরচ কম এবং উৎপাদন বেশী হয়, তাই নীট লাভ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশী।
৭) দানা বীজ দিয়ে চাষের ফলে উদ্বৃত্ত বীজ আলু খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যায়।

আলুর দানা-বীজ দুই ভাবে চাষের কাজে লাগানো যায়, যথা -

ক) আলুর চারা লাগিয়ে সরাসরি খাবার জন্য আলু চাষ।
খ) বীজ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ছোট ছোট আলুবীজ (গুড়ি আলু) উৎপাদন।

ক) দানা বীজ দিয়ে চারা তৈরী করে আলু চাষের পদ্ধতি -

বীজতলায় চারা তৈরী করাঃ- 

পুরনো না গোবর/পাতাপচা সার শুকিয়ে ভাল করে গুঁড়ো করুন। অর্ধেক গোবর যার মাটির হতে ভালো করে মিশিয়ে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু বীজতলা তৈরী করুন। বীজতলার পরিমাপ হয়ে এক (১) ও ইচ্ছা অনুযায়ী লম্বা। এবার বীজতলার উপরের অংশ সমান করে প্রন্থ বরাবর ১০ সেমি অন্তর অন্তর আধা (০৫) সেমি গরীর কারণ বপন করুন। প্রতি কানি জমিয়তো জন্য প্রায় দশ (১০) বর্গমিটার পরিমাণ বীজতলার প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের পর শুকনো গোবর ও আয় মাটির মিশ্রণ দিয়ে বীজগুলোকে হাল্কা করে ঢেকে দিন। এর পর প্রতি লিটার জলে ৫ মিলি. ক্লোরোপাইরিফস্ জাতীয় ঔষধ মিশ্রিত দ্রবণ দিয়ে বীজতলা ভিজিয়ে উইপোকা বা পিঁপড়ে মুক্ত করুন।

প্রতিদিন ঝারি দিয়ে জল দিন। দুপুরের দিকে বেশী রোদ উঠলে ছায়ার (শেড -নেট, ছন বা খড়ের ছাউনি এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন অবস্থাতেই রঙিন পলিথিন বা টিন ব্যবহার করা চলবে না) ব্যবস্থা করা উচিত। ১৫দিন পর আর ছায়ার দরকার হয় না এবং তখন ছায়ার জন্য ব্যবহৃত আচ্ছাদন সরিয়ে নিতে হবে, না হলে চারা সরু ও লম্বা আকৃতির হয়ে যাবে। লিটার প্রতি ১ গ্রাম ইউরিয়া জলে গুলে ১৫ দিন বয়সে ঝারি দিয়ে চারাগুলিকে ভিজিয়ে দিন। দানাবীজ লাগানোর ২৪-২৫ দিন পর চারা লাগানোর উপযুক্ত হয়। তখন প্রতি চারায় ৪টি থেকে ৫টি পাতা দেখা যায়।

মাঠে চারা রোপণ:

যে জমিতে আলু চাষ করবেন জায়গায় কানি প্রতি ৪-৫ টন পঁচা কাবের সার বা কম্পোষ্টার প্রয়োগ করে ভালো করে চাব দিন। এছাড়া রাসায়নিক সার হিসেবে কানি প্রতি ২৭ কেজি. ইউরিয়া, ১০০ কেজি সুপার ফসফেট ও ৩৮ কেজি. মিউরেট অব পটাস মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরী করুন। মাটি তৈরী হয়ে যাওয়ার পর পূর্ব-পশ্চিমে ১৫ সেমি. গভীর করে ৫০ সেমি. অন্তর কেইল তৈরী করতে হবে। কেইল তৈরী হয়ে যাওয়ার পর চারা লাগানোর আগের দিন নালীতে জল দিন যাতে কেইলের আধাআধি উচ্চতা পর্যন্ত মাটি ভিজে থাকে। এবার কেইলের উত্তর দিকে আধাআধি উচ্চতায় ১৫ সেমি. দূরে দূরে চারা লাগান। চারা এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে বীজ থেকে বেরুনো প্রথম পাতা দুটি কান্ডের যে অংশ থেকে বেরিয়েছে সে অংশ মাটির নীচে থাকে। লাগানোর পর নালীতে আধাআধি উচ্চতা পর্যন্ত জল দেবেন।

৩০-৩৫ দিন বয়সে কানি প্রতি ২৭ কেজি, ইউরিয়া চাপান সার হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। চাপান সার দেওয়ার পর কেইলের মাটি এমনভাবে ধরান যাতে চারাগুলো কেইলের মাঝামাঝি চলে আসে।

রোগ পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে সুসংহত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। চারা রোপণের ৮০ থেকে ৮৫দিন বয়স পর্যন্ত ৬-৭ দিন পর পর জল দিয়ে তারপর জল দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ৯০ দিন বয়সের সময় মাটির উপরের পাতা ও কান্ড কেটে ফেলুন। আরো ৭-৮ দিন পর মাটি থেকে আলু তোলার উপযুক্ত হবে।

প্রত্যাশিত ফলন কানি প্রতি ৪০-৪৫ কুইন্টাল।

খ) দানাবীজ থেকে গুড়ি বীজ আলু (Tuberlet বা Seedling tuber) তৈরী করার পদ্ধতিঃ

টিউবারলেট বা গুড়ি বীজ আলু কি? - দানাবীজ থেকে তৈরী ১০ থেকে ২২ গ্রাম ওজনের ছোট ছোট বীজ আলু যা দিয়ে আলু চাষ করলে কানি প্রতি মাত্র ১০০ কেজি প্রয়োজন হয়। এছাড়া সংকর জাতের কারনে ফলনও বেশি পাওয়া যায়। গুড়ি বীজ আলু উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষক বন্ধুরা নিজেদের বীজ আলুর সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে নিতে পারেন এবং এর মাধ্যমে নাবি ধ্বসা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারেন।

পদ্ধতি: জমি ভাল করে চাষ দিয়ে আগাছা মুক্ত করে কানিপ্রতি কমপক্ষে ৩ টন জৈবসার প্রয়োগ করে জমি আবার চাষ দিয়ে কার্ত্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে তৈরী করে ফেলুন। কানিপ্রতি ২৮ কেজি ইউরিয়া, ১০০ কেজি সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ও ৩৯ কেজি মিউরেট অফ পটাশ সার, হিসেব করে প্রয়োগ করে ভালভাবে মিশিয়ে নিন। এবারে ৬ ইঞ্চি উচু করে দেড় মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট লম্বালম্বি বীজতলা তৈরী করুন। দুটি বীজতলার মধ্যে ৫০ সেঃমিঃ করে অন্তর রাখুন।

এবারে বীজতলার উপর দ্বি-সারি পদ্ধতি অবলম্বন করে বীজ বপন করতে হবে। এজন্য ১০ সেমি দূরদূর আধা সেমিঃ গভীর করে লম্বালম্বি লাইন টানুন। দুটো দ্বি-সারির মধ্যে ৩০ সেমিঃ অন্তর রাখুন। এবার সারিতে ৩/৪ সেমিঃ পরপর দু-দিনটি করে দানাবীজ ঠিক আধা সেমিঃ গভীরতায় বপন করুন এবং পুরোনো শুকনো গোবর সার গুড়ো করে সারি গুলোকে ঢেকে দিন। এতে করে বীজ বপনের পরেও সারিগুলোকে আলাদা করে চেনা যাবে এবং বীজ অঙ্কুরোদ্গমের জন্য সঠিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করবে। ঝারি দিয়ে এমনভাবে জল দিন যেন সঠিক তসের মাত্রা বজায় থাকে। এই সময়ে বীজ অঙ্কুরোদ্গমের জন্য বেশী তসের প্রয়োজন হয়। পিপড়ে বা উইপোকা দমনের জন্য ক্লোরোপাইরফস্ জাতীয় ঔষধ ৫ মিঃলিঃ/ লিটার প্রতি জলে গুলে মাটি ভিজিয়ে দিতে ভুলবেন না।

৭/৮ দিন পর থেকে চারা উঠতে শুরু করবে। বীজের অঙ্কুরোদ্গমের পর থেকে জমি আগাছামুক্ত রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সঠিক তসের মাত্রাও বজায় রাখতে হবে। ৩০ দিন বয়সে কানিপ্রতি ১০ কেজি ইউরিয়া জমিতে ছিটিয়ে দিয়ে দ্বি-সারির মাঝ বরাবর লাঙ্গল চালিয়ে গাছের গোড়ায় এমনভাবে মাটি তুলে দিন, যাতে করে প্রতি দুটো সারি পরপর নালা তৈরী হবে, যা দিয়ে জলসেচ করা যাবে। একইভাবে ৪৫ দিন পর কানি প্রতি ১০ কেজি ইউরিয়া দিয়ে আরো একবার এবং ৬০ দিন পর কানিপ্রতি ৫ কেজি ইউরিয়া দিয়ে আরেকবার মোট তিনবার মাটি তুলে দিতে হবে।

ফসল তোলা:

৭৫ দিন পর জলসেচ একেবারে বন্ধ করতে হবে, এবং ৮০-৮৫ দিনের মাথায় মাটির উপরের সমস্ত সবুজ কান্ড কেটে ফেলতে হবে। আরো ৭-৮ দিন রেখে ছোট ছোট গুড়িআলু তুলে আনুন। লক্ষ্য রাখবেন আলুর নরম খোসা যেন ছড়ে না যায়। তুলে আনা আলুগুলোকে সরাসরি রোদ লাগে না এমন শুকনো জায়গায় ছড়িয়ে দিন। কিছুদিন পর পোকা এবং রোগাক্রান্ত আলুগুলি সরিয়ে ফেলুন। এবার ৩ শতাংশ বোরিক এসিডের মিশ্রণ দিয়ে ছোট বীজ আলুগুলিকে ভালভাবে ভিজিয়ে দিন। তারপর দরকার হলে বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়ে ভাল করে শুকিয়ে নিন। এবার নতুন বস্তায় পুরে হিমঘরে মজুত করুন পরবর্তী বছরের জন্য।

ত্রিপুরার কৃষকবন্ধুরা, কৃষিদপ্তরের নিকটবর্তী গ্রামসেবকের কাছে আপনার প্রয়োজনীয় TPS- এর জন্য আবেদন করুন। আর রাজ্যের বাইরে যদি কেউ সংগ্রহ করতে চান তাহলে নিচের ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন। প্রতি গ্রাম TPS-এর মূল্য ২০/- টাকা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ