Advertisement

Responsive Advertisement

বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের হ্যাঁ তা আমরা স্বীকার করছি : অধীর রঞ্জন চৌধুরী

আগরতলা, ১১ফেব্রুয়ারী: কংগ্রেস বামফ্রন্ট প্রার্থীরা জয়ী হলেত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হবেন জিতেন্দ্র চৌধুরী। আগরতলায় একথা সংবাদ মাধ্যমের সামনে জানিয়ে দিলেন কংগ্রেস নেতা এবং সংসদের বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। 
ত্রিপুরা রাজ্যের সন্ত্রাসের পরিবেশের জন্য উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই তারা রাজ্যের জিরো ভায়োলেন্স'র আহ্বান জানিয়ে হোডিং লাগিয়েছে, এই অভিযোগ কংগ্রেস নেতা এবং সংসদে বিরোধী দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর। শনিবার আগরতলায় এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এই অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
 দলের পক্ষে ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচনী কর্মসূচিতে অংশ নিতে শনিবার তিনি আগরতলা এসেছেন। এদিন সন্ধ্যায় আগরতলার কংগ্রেস ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা বলেন। তার বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, আগরতলা বিমানবন্দরের বাইরে বিশাল পোস্টার লাগিয়ে নির্বাচন কমিশনের তরফে আহ্বান জানানো হয়েছে জিরো ভায়োলেন্স'র পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য। তিনি আরো বলেন এই পোস্টার বলে দেয় রাজ্যে কেমন পরিবেশ রয়েছে এবং কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে কতটুকু উদ্বিগ্ন।
 তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের আহব্বানের পরও শনিবার দিনই রাজধানী আগরতলার পার্শ্ববর্তী সূর্যমনি নগর এলাকায় চার কংগ্রেস সমর্থকদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন যাতে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে তার জন্য তিনি বিশেষ আহবান জানাচ্ছেন। সারা রাজ্যজুড়ে একই আলোচনা এই মুহূর্তে, সবাই একই কথা বলছে যে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিজেপি একটি আসনেও জয়ী হবে না। তাই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে কিনা এই নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ ভোটাররাও। সেই সঙ্গে অধীর রঞ্জন চৌধুরী আরো বলেন তিনি এই রাজ্যে বহুবার এসেছেন, কিন্তু এখন রাজ্যের যে রক্ত এবং হিংসার পরিবেশ রয়েছে এমন পরিবেশ আগে কখনো ছিল না।
 বিজেপি নেতাকর্মীরা দাবি করছেন তারা মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। যদি বাস্তবেই তারা মানুষের জন্য কোন কাজ করতো তাহলে তাদেরকে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতে হত না। তারা মানুষের জন্য কোন কিছু করেনি। কোন কিছু না করেই তারা আবার জয়ী হতে চাইছে তাই তারা রাজ্য জুড়ে এত সন্ত্রাস করছে।
 বিজেপির মুখে সবকা সাত সবকা বিকাশ এবং আচ্ছে দিনের কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে তাদের সময় আচ্ছে দিন বনবাসে চলে গিয়েছে। মোদি সারাদেশ জুড়ে গুজরাট মডেলের কথা বলে বেড়ান। কিন্তু তার এ গুজরাট মডেল কবে হয়েছে, গুজরাট মডেল কেন্দ্র যখন কংগ্রেস সরকার ছিল তখন হয়েছে বলে দাবি করেন। দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন মোদির ভুলনীতির কারণে দেশের কোটি কোটি মানুষ চরম সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। মোদির কারণে ব্যাংক এবং এলআইসি ডুবতে বসেছে, তার বন্ধু আদানির হাত ধরে চরম সংকট নেমে এসেছে ভারতে। দেশ থেকে যে ২৮ জন অর্থ করে লুট করে পালিয়ে গিয়েছেন তার মধ্যে ২৭ জন মোদির গুজরাট রাজ্যের বল দাবি করেন তিনি।
 বিজেপির আমলে ত্রিপুরার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি বলেন বিজেপি সরকারের পাঁচ বছরে কুড়ি হাজার সরকারি পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। ১০৩২৩ শিক্ষকদের অবস্থা চরম খারাপ হয়েছে। ১৪০ জনের বেশি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
একই ভাবে এই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার ও চরম অবনতি হয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত রাজ্যে ২০৬৮টি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে, খুন হয়েছেন ৬০ জনের বেশি। রাজ্যের এই সরকারের সময় সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত, চাষীরা যে সহায়ক মূল্যের ধান বিক্রি করছেন। এই বিক্রির ক্ষেত্রে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া এবং চাষীর মধ্যে একাংশ মধ্যস্বত্তভোগী কমিশন খাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
 পাশাপাশি এর দিন তিনি তৃণমূল কংগ্রেসকেও এক হাত নেন। তার অভিযোগ তৃণমূল এখানে কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তার মতে দিদি এবং মোদী ভাই বোনের মতো চক্রান্তে লিপ্ত। নিজেরা বোঝাপড়ার মাধ্যমেই সব কাজ করছে। তাদের দলের নামে পার্থক্য থাকলেও নীতি গত কোন পার্থক্য নেই। দিদি ই ডি এবং সিবিআই এর হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিকে সমর্থন করছে অপরদিকে মোদি বিরোধীদের প্রশ্ন থেকে বাঁচতে দিদিকে সমর্থন করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি । এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোটারদের প্রতি তার আহ্বান যাকে খুশি তাকে ভোট দিন বিজেপিকে বাদ দিয়ে। তবে ভোটদানে যাতে সবাই এগিয়ে আসে এই আহ্বান রাখেন।
 সাংবাদিকদের প্রশ্নের তিনি স্বীকার করেন ত্রিপুরায় কংগ্রেস দল বামফ্রন্টের তুলনায় অনেকটাই দুর্বল তাই তারা মাত্র ১৩ টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টিকে মেনে নিয়েছেন বলেও তিনি এদিন অকপটে স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে তিনি জানান কংগ্রেস বাম প্রার্থীরা জয়ী হলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হবেন বামফ্রন্টের জিতেন্দ্র চৌধুরী। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ