আগরতলা, ১০ সেপ্টেম্বর: বিচার প্রক্রিয়ায় তিনটি নয়া ফৌজদারী আইন আগামীদিনে ব্যাপক কাজে আসবে। দেশের মধ্যে একমাত্র রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরায় নয়া ফৌজদারী আইন নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হয়েছে। বর্তমানে এই তিনটি আইন কার্যকরের মাধ্যমে নাগরিকদের অনেক সুবিধা হয়েছে।
আজ আগরতলার হাঁপানিয়াস্থিত ইনডোর এক্সিবিশন হলে নয়া ফৌজদারী আইনের উপর রাজ্যভিত্তিক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, সময় মতো যদি কোন কাজ না হয়, সময় মতো যদি ন্যায় যথাযথভাবে দেওয়া না যায়, তবে আইন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা থাকে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনে ২০২৪ এর ১ জুলাই যুগান্তকারী আইন আমাদের সামনে নিয়ে আসা হয়। আর সেটার বিল পাশ হয়েছে সংসদেও। এই বিষয়ে গুয়াহাটিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বিল পাশের পর আইন কার্যকর করার বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি এবং মুখ্যসচিব ও ডিজিপি ছিলেন। সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জিজ্ঞেস করছিলেন যে নতুন ক্রিমিনাল আইন নিয়ে কি কি কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের তরফ থেকে সমস্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা অনেক দিক দিয়ে সামনের সারিতে রয়েছে। আজ এখানে তিনটি নয়া ফৌজদারী আইন নিয়ে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেদিক দিয়ে ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য, যেখানে এধরণের আয়োজন করা হয়েছে। সর্বভারতীয় স্তরে সবদিক দিয়ে যেকোন প্যারামিটারে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। রাজ্যে আধিকারিক থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরা যেকোন বিষয়ে সচেতন। এতে অনেক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। আমরা জাতীয় স্তরেও আমাদের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখছি। বিভিন্ন সময়ে আমাদের সম্মানিতও করা হয়। আজ নতুন তিনটি আইন - ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ও ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম নিয়ে আলোকপাত ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত, এই তিনটি আইনে কি কি হবে সেবিষয়ে বিশদ ধারণা দিতে এই ৫ দিনের প্রদর্শনীর আয়োজন হয়েছে।
আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এখন সব বিষয়ে সংস্কার হচ্ছে। ডি রেগুলেশন হচ্ছে। ব্রিটিশ আমল থেকে যেসকল কলোনিয়াল (ঔপনিবেশিক) আইন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে রয়েছে, সেগুলি পরিবর্তন করার কোন উদ্যোগ নেয়নি পূর্বতন সরকারগুলি। আর সেটাই এখন করে দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার। রাজ্য সরকারও সেই দিশায় কাজ করছে। আমরা ক্যাবিনেটে অনেকগুলি ডি রেগুলেশন পাশ করিয়েছি। ডাঃ সাহা বলেন, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ২৯০ ধারা এমনভাবে করা হয়েছে যা সময় ভিত্তিক একটা আইন। আগে একটা মামলা হলে এফআইআর করতে স্বশরীরে যেতে হতো। আর এখন সবকিছু সহজ হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনটা আইন কার্যকর হয়ে নাগরিকদের অনেক সুবিধা হয়েছে। প্রথমবার কেউ অপরাধ করলে অপরাধের গুরুত্ব বুঝে তার সাজা কম করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থাৎ নাগরিক বান্ধব আইন কার্যকর করা হয়েছে।
বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন ফৌজদারী আইনে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তাতে আরো সহজ/ সহায়ক হয়েছে। এখানে আরও বলা হয়েছে স্বশরীরে কোন ব্যক্তি পুলিশ স্টেশন (থানা) উপস্থিত ছাড়াই ইলেকট্রনিক মাধ্যমে রিপোর্ট পেশ করতে পারেন। তাতে স্বচ্ছতার পাশাপাশি দ্রুততা বজায় রাখা সম্ভব হবে। এখন জিরো এফআইআর এর মাধ্যমে যেকোন জায়গা থেকেই যেকোন নাগরিক অভিযোগ জানাতে পারেন। পাশাপাশি যেকোন ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলে প্রয়োজন সাপেক্ষে সে তার কোন নিকটতম বা পরিচিত ব্যক্তিকে অবগত করতে পারবে। বিভিন্ন ঘটনা বা অপরাধের ক্ষেত্রে ফরেনসিক টিমের একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। নয়া ফৌজদারী আইনে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। অপরাধের শিকার নারী ও শিশুদের বিনা পয়সায় হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মীনা রাণী সরকার, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, অতিরিক্ত মহানির্দেশক এম রাজা মুরাগন, জি এস রাও সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। এছাড়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। উল্লেখ্য, এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
0 মন্তব্যসমূহ