আগরতলা, ৩১ জুলাই: রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে পার্টি অফিসের মাধ্যমে চাকরি বিলি করতো বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি প্রদান করছে।
জাতীয় ওরাল হেলথ প্রোগ্রাম ও জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের উদ্যোগে আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে আয়োজিত মেডিকেল অফিসার (ডেন্টাল), নার্সিং অফিসার ও কমিউনিটি হেলথ অফিসারদের দুদিন ব্যাপী রাজ্যভিত্তিক প্রশিক্ষন কার্যক্রমে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে কৈলাশহর ও বিশালগড়ের জন্য দুটি ভ্রাম্যমান রক্ত সংগ্রহ পরিবহন ভ্যানের ফ্ল্যাগ অফ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমরা বিভাজনের নীতিতে বিশ্বাস করি না। যারা দীর্ঘ সময় ধরে শাসন ব্যবস্থায় ছিল তারা এই ধরনের বিভেদ নীতি অনুসরণ করেছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আমাকে চাকরি বিতরণের অভিযোগ তুলেছেন, তবে এই অভিযোগটি কিসের ভিত্তিতে রয়েছে? তাদের আমলে পার্টি অফিস থেকেই এই কাজ করা হয়েছিল। আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৯,০০০ এর অধিক চাকরি প্রদান করেছি। এই স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারে নি। তাদের জমানায় ১০,৩২৩ শিক্ষকের মামলা এখন ইতিহাসের অংশ।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা অভিযোগ করেন সিপিএম মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আগে সরকারী কর্মীদের ডিএ এর জন্য আন্দোলন করতে হয়েছিল। কিন্তু আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর কোন কর্মচারীকে আন্দোলন করতে হয়নি। আমি কেন্দ্রের সাথে ডিএ ব্যবধৈ হ্রাস করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। এর আগে কর্মচারীদের বদলির জন্য ঘুষ দিতে হয়েছিল। এখন কেউ দাবি করতে পারে না যে অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়।
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, আগরতলাতেই শুধু নয়, রাজ্যের জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলিতেও আধুনিক চিকিৎসা পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ করা হচ্ছে। রাজ্যে ইতিমধ্যেই কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হচ্ছে। লিভার ও হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার মতো পরিকাঠামো তৈরি করার জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ.জি.এম.সি.-তে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সুপার স্পেশালিটি ব্লক তৈরি করা হয়েছে। আগের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশি ছাত্রছাত্রী এম.বি.বি.এস, ডেন্টাল সায়েন্স, নার্সিং প্রভৃতি বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতে পারছে। রাজ্যে রেফারেল হাসপাতালগুলি সহ অন্যান্য হাসপাতালেও সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আরও আন্তরিক হতে হবে। উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের আরও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালগুলি পরিচালনার জন্য রাজ্য সরকার হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ৫ লক্ষ ১৬ হাজার মানুষকে আয়ুষ্মান কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ১৭ কোটি টাকা সহায়তা করা হয়েছে। চক্ষু চিকিৎসার জন্য আগরতলায় রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অব অপথালমোলজি স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগরতলার ডেন্টাল কলেজের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই কলেজটিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ডেন্টাল কলেজে উন্নীত করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের যুগ্ম অধিকর্তা অলক দেব, আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষা ডাঃ শালু রাই সহ অন্যান্য বিশিষ্ট চিকিৎসকগণ।
0 মন্তব্যসমূহ