Advertisement

Responsive Advertisement

বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাউন চাষ


      বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাউন চাষ
(রাজ্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্র অরুন্ধতিনগর কৃষি বিভাগ, ত্রিপুরা সরকার) 

কাউন বা ইটালিয়ান মিলেট, ফক্সটেইল মিলেট নামেও পরিচিত। ভারতে কাউন বৃষ্টি নির্ভর অঞ্চলে বা যে সমস্ত এলাকায় সেচের ব্যবস্থা নাই সেসব অঞ্চলে উৎপাদন করা হয়। কাউনের বহুবিধ ব্যবহার আছে। কাউন ভাতের মতো সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। কোথাও কোথাও কাউনের বীজ পিষে আটা করে চাপটি তৈরী করে খাওয়া হয়।

কাউনের যথেষ্ট পুষ্টিগুণ রয়েছে ১১০০ গ্রাম কাউন দানায় ১২.৩ শতাংশ প্রোটিন, ৪.৭ শতাংশ, স্নেহদ্রব্য ও ভেল ৬০.৬ শতাংশ, কার্বহাইড্রেট এবং ৩.২ শতাংশ অ্যাশ থাকে।

উদ্ভিদতাত্বিক বিবরণ ও বিস্তার: ভারাতে কর্ণাটক, অন্ধপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশে এবং ত্রিপুরায় জুম চাষ এলাকায় কাউন চাষ করা হয়। কাউনের কান্ড নমনীয় এবং খাড়া। বর্ষজীবি ফসল হিসেবে কাউন চাষ করা হয়। উচ্চতা ১০ থেকে ১৫০ সোমি। বীজ খুব ছোট।
আবহাওয়া: কাউন উষ্ণ কিংবা শীতল উভয় জলবায়ু অঞ্চলেই সাফল্যজনকভাবে উৎপাদন করা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার অবধি উচ্চতায় কাউন চাষ করা যায়। কাউনের সমগ্র জীবনকালে মাঝারি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। বার্ষিক ৫০০ থেকে ৭৫০ মিঃমি বৃষ্টিপাতে কাউন সফল্য জনকভাবে ফলে।

মাটি: ভাল ফলনের জন্য উর্বর এবং জল নিকাশের সুবন্দোবস্ত জমি কাউন চাষের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন, যদিও অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমিতেও কাউন চাষ করা যায়। হালকা লাল দোয়াশ, পলি মাটি কিংবা কালোমাটি কাউন চাষে উৎকৃষ্ট।

জাত: এস.আই.এ-৩১৫৬, ডি.এইচ.এফ.টি-১০১-৩, ডি.এইচ.এফ.টি-১০১-৩, অর্জুন, আই এস সি-৭০১, আই এস সি - ২০১, আই এস সি ১১৯ এর সঙ্গে জুম ফসলে ব্যবহৃত জাত গুলি কাউন চাষের জন্য উপযুক্ত।
জমি তৈরী: সমতল কিংবা সমান টিলা জমির মাটি বর্ষা শুরুর আগে এক দু-বার চাষ দিয়ে রাখতে হবে। এরপর প্রাক মৌসুমী বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে জমি ভালভাবে অন্ততঃ দু-বার চাষ দিয়ে চৌরস করতে হবে। জমিতে জল নিকাশের সুব্যবস্থা করতে হবে। টিলার ঢালে হালকা চাষ দিয়ে কিংবা খুচিয়ে কাউনের বীজ বপন করা হয়।

বীজের পরিমান: এক হেক্টর জমিতে কাউন চাষের জন্য লাইনে কিংবা খুচিয়ে লাগালে ৮ থেকে ১০ কেজি বীজ লাগবে।

বীজ শোষন: বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজ ১ গ্রাম কার্বেনডাজিম দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। কার্বেনডাজিম ২৫ শতাংশ (বেভিষ্টিন) এবং মেনকোজেব ৫০ শতাংশ পাউডার এক সাথে জলে মিশিয়ে প্রতিকেজি বীজ শোধন করলে বীজ বাহিত রোগ জীবানু মারা যায় এবং এতে পরবর্তী সময়ে রোগ ও কীটশত্রুর আক্রমণ কম হয়।

বীজ বোনার সময়: জলদী জাত কাউনের ক্ষেত্রে, মে মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। প্রধান ফসল হিসেবে চাষ করলে জুন-জুলাই এবং দেরীতে চাষ করলে আগষ্ট মাস অবধি কাউন বীজ বোনা যায়।

দূরত্ব: লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ২৫-৩০ সেঃমি। বীজ বোনার গভীরতা ২-৩ সেঃমি।

সার প্রয়োগ: জৈব / আবর্জনা পচা সার হেক্টর প্রতি ১০ টন, নাইট্রোজেন ৬০ কেজি অর্থাৎ ইউরিয়া ১৩০ কেজি, ফসফরাস ৩০ কেজি অর্থাৎ সিঙ্গেল সুপার ফসফেট- ১৮৭ কেজি, পটাশ - ৩০ কেজি, মিউরেট অব পটাশ ৫০ কেজি।

উপরোক্ত সারের অর্ধেক পরিমান নাইট্রোজেন ঘটিত সার (ইউরিয়া) এবং ফসফরাস ও পটাশ ঘটিত সারের পুরোটা জমি তৈরীর সময় শেষ চাষের আগে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া প্রথম বার জলসেচের সময় দিতে হবে।
জলসেচঃ খরিফখন্দে চাষ করলে কাউনে কোন জলসেচ লাগেনা। তবুও যদি অনেকদিন খরা থাকে তবে ভাল ফসলের জন্য বীজ বোনার ২৫ থেকে ৫০ দিন পর, ১-২ বার জলসেচ দিতে হবে। কাউন জমা জল সহ্য করতে পারেনা। সেজন্য অতিরিক্ত জল জমি থেকে বের করে দিতে হবে।

আগাছা নিয়ন্ত্রন: কাউনের পুরো জীবনকালে ২-৩ বার প্রয়োজন মত আগাছা বাছাই করে দিলে ভাল ফসল পাওয়া যায়।
কীটশত্রু: কাউনে বিশেষ কোন পোকার উপদ্রব হয় না।
রোগ নিয়ন্ত্রনঃ কাউনে খোলা ধ্বসা এবং ডাউনি মিলডিও রোগের প্রার্দুভাব দেখা যায়। উপরোক্ত রোগগুলো দমনের জন্য বীজ বোনার আগে কার্বেনডাজিম ১ গ্রাম প্রতিকেজি বীজে মিশিয়ে শোধন করতে হবে। তাছাড়া প্রয়োজনে গাছের অঙ্গজ বৃদ্ধি দশায় কার্বেনডাজিম ১-২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে।
ফসল তোলা। কাউনে ৫০-৬০ দিনের মাথায় ফুল আসে এবং ৮০-৯০ দিনের মাথায় ফসল পরিপক্কতা লাভ করে।

ফলন: হেক্টর প্রতি ১০-১২ কুইন্টাল। আয়-ব্যয়ের হিসাবঃ কাউন ফসলে খরচ খুব কম লাগে। কারণ এই ফসলের জন্য বিশেষ কোন যত্ন ও পরিচর্যার দরকার হয়না। আউস ফসলের তুলনায় যত্ন ও পরিচর্যা অনেক কম। অন্যান্য খরচ ও তুলনামূলক কম। হেক্টর প্রতি ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা অবধি আয় হয় (কানি প্রতি ৯৫০০ থেকে ১২,৫০০)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ