Advertisement

Responsive Advertisement

মৃত্যু ছাড়া মানুষের একান্ত নিজের কিছু নেই, জীবন অন্যরা ভাগ করে নেয় খুব প্রকাশ্যে

"মৃত্যু ছাড়া মানুষের একান্ত নিজের কিছু নেই, 
জীবন অন্যরা ভাগ করে নেয় খুব প্রকাশ্যেই।"

         ডা. কনক চৌধুরী
(রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সৃজনশীল লেখক)



ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটির একটা ছেলের মারা যাওয়ার খবর দেখে হুট করেই মনে হলো, মৃত্যু ছাড়া আমাদের আসলে নিজের বলতে আছেটা কী? 
এই ছেলেটা গ্র্যাজুয়েশন করেছে।বিয়ে করেছে। দুটো বাচ্চা আছে।বৌ আছে। কিছুদিন আগের এডমিনিস্ট্রাটিভ পরীক্ষায় দারুণ ফলাফল করেছে।
এই এতো স্ট্রাগল,এতো পরিশ্রম এক মুহূর্তে শূণ্য হয়ে গেল, ছেলেটার তাহলে নিজের বলে থাকলো কী? 
ভালো ক্যারিয়ার, অসম্ভব পরিশ্রম করে তিলে তিলে গড়ে তোলা ক্যারিয়ার, এই ক্যারিয়ারটাও কি আসলে আমার নিজের? না তো। এই ক্যারিয়ারে মায়ের ভাগ আছে, বাপের ভাগ আছে, ভাইয়ের লেখাপড়া আছে, বোনের বিয়ে আছে, বৌ এর শখ আছে,বাচ্চার দুধ আর খেলনাও আছে।এবং এই একটা ক্যারিয়ার বানানোর জন্য মানুষকে সবকিছুই ছাড়তে হয়।সত্যিকারভাবেই সবকিছুই। টাকার ব্যাপারটা তো আছেই, সময়ের ব্যাপারটাও খুব জরুরী। চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে বহু ছেলেমেয়ে ভ্রমণে যাওয়া ছেড়ে দেয়,বই পড়া ছেড়ে দেয়,প্রেম করা ছেড়ে দেয়,রেস্টুরেন্টে খাওয়া ছেড়ে দেয়,এমনকি অনেকে তো মন্দির বা মসজিদে প্রার্থনা পর্যন্ত করতে পারে না। 
একবার এক ভাইকে রাতের বেলা অনেক নামাজ পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম,সারাদিন ল্যাবরেটরিতে কাজের ঠেলায় নামাজটা পর্যন্ত পড়তে পারতেন না।খাওয়া তো দূরের কথা।মলিন হাসি মুখে নিয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি ধনী হইতে চাই না ভাই, শুধু এতোটুকু অবসর চাই, যতটুকু অবসর পেলে আমি একটু শান্তিমতো নামাজটা পড়তে পারি।কেউ সারারাত ফোন নিয়ে রাতে দাঁড়িয়ে থাকে, বাপ অসুস্থ, বাপের কাছে যেতে পারে না। শুধুমাত্র একটা ক্যারিয়ারের জন্য।একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য। 
সমস্যা হলো, ফিউচার প্ল্যানে আমরা সবকিছুই ইনক্লুড করি, শুধু মৃত্যুটা ছাড়া। আমাদের পরিকল্পনায় পরিবার থাকে,প্রেমিকা থাকে,গাড়ি থাকে,বাড়ি থাকে কিন্তু মৃত্যুটা থাকে না।অথচ মৃত্যুটাকে মাস্টারপ্ল্যানে রাখতে পারলেই কিন্তু আমার আপনার অনেক "জরুরী"র তালিকা বদলে যাবে।আন্দামানের ট্যুরটা হয়ে যাবে,"ওয়্যার এন্ড পিস" বইটি পড়ে ফেলার সময় হবে,প্রার্থনার আরো বেশী সময় বেরিয়ে আসবে আপনার জীবনে।কারণ, আপনি জানেন,মৃত্যু অপেক্ষা করছে কোথাও।কাজ গুছিয়ে নাও,হাতে খুব বেশি সময় নাই।না,আমি নিজে বোহেমিয়ান টাইপ মানুষ না, আপনাকেও বাউন্ডুলে হতে অনুপ্রেরণা দিচ্ছি না। বরং পরিবারকে আমরা দাঁড় করাবো,ভালোবাসবো,দায়িত্ব পালন করবো,সবটাই করবো।সাথে সাথে সহজ করে নেবো মৃত্যুর সাথে সম্পর্কটাও। বশ করে নেবো আমাদের দুর্বলতাকেও, আমাদের মৃত্যুকেও। 
তখন দেখবেন,কিছু কাজ যেটা আপনি একান্তই আপনার বলে অবহেলায় ফেলে রেখেছেন,কাজটা আপনার করা হয়ে যাবে। মৃত্যু আপনার পরিবারের পাশাপাশি আপনাকেও আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।জীবন নিয়ে প্ল্যান করার সময় একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, জীবনটা আপনার না।এখানে আপনার ভাগ কম। আপনার জীবন আপনার চোখের সামনেই ভাগ করে নেবে আপনার পরিবার,আপনার বন্ধু বা আপনার আত্মীয়রা। 
কিন্তু,মৃত্যুটা আপনার একান্তই নিজের। আপনার মৃত্যুর ভাগটা কেউ নেবে না, সেটা আপনাকেই নিতে হবে। তাই,যে কোন প্ল্যানে জীবনের আগে মৃত্যুর কথাটা থাকা চাই। কষ্ট করতে করতে নিজেকে যন্ত্র করে ফেলার আগে মনে থাকা চাই কবি ইমতিয়াজ মাহমুদের লেখা দুটো লাইন,
"মৃত্যু ছাড়া মানুষের একান্ত নিজের কিছু নেই, 
জীবন অন্যরা ভাগ করে নেয় খুব প্রকাশ্যেই।" 
(এক বন্ধুর টাইমলাইন এর ছায়া থেকে এই অণুগল্প)  
১৬/০৪/২০২৪,
কনক চৌধুরী, 
ত্রিপুরা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ