Advertisement

Responsive Advertisement

বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়ের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ভাষণ

বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়ের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ভাষণ

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়।

আমি এই মহতী সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্যের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। এই পবিত্র বিধানসভায় মাননীয় সদস্যবৃন্দ এবং এই মহান রাজ্যের সকল অংশের জনসাধারণকে এই বাজেট উপলক্ষে সম্বোধিত করতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।
আপনারা জানেন যে, দেশের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজির প্রদর্শিত পথে ও রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা মহোদয়ের সুযোগ্য নেতৃত্বে আমাদের রাজ্য প্রগতি ও বিকাশের পথে অগ্রসর হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে আমি আমাদের সাফল্য ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আপনাদের অবগত করতে এবং সেইসঙ্গে রাজ্যের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের রূপরেখা উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়েছি। রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের রাজ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। আমাদের সরকার সমাজের সকল অংশের জনগণের সহযোগিতা দ্বারা অনুপ্রাণিত, আমরা স্বীকার করি যে, মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা এবং সামগ্রিক উন্নতির জন্য আরও অনেক সমৃদ্ধিমূলক কাজ করা প্রয়োজন এবং 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস' এই মন্ত্রের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজ্যের উন্নতিতে প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। আজকে আমরা আগত অর্থবর্ষের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছি, তার বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক দূরদর্শিতা, ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন ও স্থায়ী বিকাশের প্রতি আমাদের সুদৃঢ় দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করছি।
আমাদের এবারের বাজেট বরাদ্দে রাজ্য পরিচালনায় দক্ষতা, দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার প্রতি আমাদের অগ্রাধিকারকে প্রতিফলিত করবে। আমরা সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার প্রদান, অভিনবত্ব, ব্যবসায়িক উদ্যোগ, কর্মসংস্থানের পথ সুদৃঢ় এবং বাস্তবায়ন করার প্রয়াস করছি। বর্তমানে নিত্যনতুন যে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা উদ্ভুত হচ্ছে বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবের মত সংকট মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমরা জনসম্পদ রক্ষা, কর্মসংস্থান ও জনকল্যাণের জন্য দৃঢ়ভাবে সংকল্পবদ্ধ ছিলাম এবং রয়েছি। এই বাজেটের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে সুদৃঢ় করা, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পসমূহের পরিবর্ধন করা এবং ভবিষ্যতের যে কোনও সংকট মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাছাড়া রাজ্যের মানুষের মধ্যে থাকা সম্ভাবনাসমূহের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য শিক্ষা, দক্ষতা বিকাশ ও পরিকাঠামো উন্নয়ন- এই ৩টি ক্ষেত্রের উপর যথেষ্ট পরিমাণ জোর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আমাদের সরকার উপলব্ধি করেছে, যা আমাদের রাজ্যকে উন্নতি এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

কৃষি ও কৃষক কল্যাণ

১) ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে রাজ্যে ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৩৩৯ জন কৃষক 'প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনার' আওতায় সুবিধা পেয়েছেন। ৬৪০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা সুবিধাভোগী কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে। রাজ্যের ১২ লক্ষ ৪৬ হাজার কৃষকের ফসল 'প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার' আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৬০টি কিষাণ ক্রেডিট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের আওতায় রাজ্যের কৃষকরা এখন পর্যন্ত ঋণ পেয়েছেন ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা।

২) ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে গত মরশুম পর্যন্ত রাজ্যের কৃষকদের থেকে ১ লক্ষ ৯২ হাজার মেট্রিকটন ধান ন্যূনতম সহায়কমূল্যে (এমএসপি) ক্রয় করা হয়েছে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কৃষির প্রসারের জন্য এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৭৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ বর্ষ থেকে ১৩ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমি ফলমূল
২) ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে গত মরশুম পর্যন্ত রাজ্যের কৃষকদের থেকে ১ লক্ষ ৯২ হাজার মেট্রিকটন ধান ন্যূনতম সহায়কমূল্যে (এমএসপি) ক্রয় করা হয়েছে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কৃষির প্রসারের জন্য এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৭৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ বর্ষ থেকে ১৩ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমি ফলমূল চাষের আওতায় আনা হয়েছে এবং ১৮ হাজার ৭৬৪ হেক্টর জমি হাইব্রিড শাকসব্জি চাষের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

৩) রাজ্য সরকার জৈব ও প্রকৃতিবান্ধব চাষ পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে স্থায়ী (সাস্টেইনেবল) কৃষি পদ্ধতির বিকাশে। চিরাচরিত কৃষি পদ্ধতি ছাড়াও বেবি কর্নের মত অপ্রচলিত ফসল চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৬২ হেক্টর জমিতে বেবি কর্ন চাষ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে মিলেট চাষকে উৎসাহ দিয়েছে এবং এই অর্থবর্ষে ১৩.৫০ মেট্রিকটন মিলেট বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

৪) আমি আনন্দের সাথে এই মহতী সভাকে জানাতে চাই যে, রাজ্য সরকারের ধানের ক্রয়মূল্য কেজি প্রতি ২০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২১ টাকা ৮৩ পয়সা করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কার্যকর হয়েছে। নিখুঁত ফসল সম্বন্ধীয় পূর্বাভাস প্রদানের জন্য ভূমির রেকর্ড এবং সাময়িক ফসল জরিপের তথ্য সংযোগ করে একটি 'ঐক্যবদ্ধ কৃষক তথ্য ডাটাবেস' তৈরি করা হচ্ছে।

৫) রাজ্য সরকার কৃষিক্ষেত্রে নয়া প্রযুক্তিভিত্তিক নিবিড় সম্প্রসারণমূলক কার্যক্রমের জন্য লেফুঙ্গা এবং বেলবাড়িতে ২টি নতুন কৃষি মহকুমা সৃষ্টি করেছে। আমি উত্তর ত্রিপুরার যুবরাজনগর এবং পশ্চিম ত্রিপুরার পুরাতন আগরতলায় আরও ২টি কৃষি মহকুমা খোলার প্রস্তাব রাখছি।

৬) অরুন্ধতীনগরস্থিত রাজ্য কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে একটি 'শাকসব্জির অবশিষ্টাংশ পরীক্ষাগার' এবং 'জার্ম প্লাজম সংরক্ষণ কেন্দ্র' ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হবে।

৭) আমি আরও প্রস্তাব রাখছি যে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ২৩ কোটি ৭১ লক্ষ টাকায় ৮টি নতুন 'কৃষি উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র' নির্মাণ করা হবে। তৈদুতে ইন্দো-ডাচ প্রকল্পে ৯ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লেবু জাতীয় ফলের 'এক্সেলেন্স সেন্টার' এবং লেম্বুছড়াতে ইন্দো-ইজরায়েল অ্যাকশন পরিকল্পনায় একটি 'এক্সেলেন্স সেন্টার অন ফ্লাওয়ার্স' ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে ফল, সব্জি ও ফুলের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য এবং সর্বোৎকৃষ্টমানের চারা ইত্যাদি সরবরাহ করার জন্য।


প্রাণীসম্পদ বিকাশ

৮) রাজ্য সরকার রাজ্যের চাহিদা পূরণের জন্য দুধ, মাংস ও ডিম উৎপাদনের স্বনির্ভরতার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। লিঙ্গ বিয়োজনের মাধ্যমে কৃত্রিম গর্ভধারণ প্রক্রিয়ায় গবাদি পশুর গুণগত উন্নতি করা হচ্ছে। তাছাড়া উচ্চ উৎপাদনশীল প্রজাতির গবাদি পশু ও পাখির 'এক্সোটিক জার্ম প্লাজম' রাজ্যের কৃষকদের প্রদান করা হয়েছে।

৯) রাজ্য সরকার 'ন্যাশনাল লাইভস্টক মিশনের' অধীনে গবাদি পশু ও পোল্ট্রিভিত্তিক শিল্পোদ্যোগকেও গুরুত্ব দিয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকার ৬ হাজার টাকা করে নগদ পুরস্কারের মাধ্যমে ২ হাজার ৯০০ জন অগ্রগতিশীল প্রাণীপালক কৃষকদের সম্মানিত করেছে। কৃত্রিম গর্ভধারণের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নত প্রজাতির দ্রুত বর্ধনশীল ছাগ উৎপাদন করতেও গুরুত্ব দেওয়া হবে।

১০) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য এই ক্ষেত্রে সর্বমোট বরাদ্দ হল ১৮৩ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা।

মৎস্য

১১) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ৫টি খুচরো 'মৎস্য বিপণি' নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ২ হাজার ৪২০ জন মৎস্যচাষীকে মৎস্যচাষে সহায়ক জিনিসপত্র প্রদান করা হয়েছে। ৫৮৮ জন মৎস্যচাষীকে মাছের চারাপোনা প্রদান করা হয়েছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ডুম্বুর হ্রদে 'কেজ কালচার' শুরু করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই ১ হাজার ৫১২টি কেজ স্থাপন করা হয়েছে। ২টি 'মৎস্যচাষ জ্ঞান কেন্দ্র' এবং ১টি 'মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্র' স্থাপনের কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে, ৩ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে।

১২) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১৭ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪টি 'মৎস্যচাষ জ্ঞান কেন্দ্র' এবং ১টি 'মৎস্যবিদ্যা সচেতনতা কেন্দ্র' নির্মাণ করা হবে।

শিক্ষা (মাধ্যমিক ও প্রাথমিক)

১৩) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে রাজ্যে রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি ২০২০ বাস্তবায়িত করা হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী পাঠক্রম ও নিয়মাবলী চালু করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আরআইডিএফ-এর অধীনে ২১টি উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিকস্তরের বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে, যার জন্য ১২৩ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হবে।

উচ্চশিক্ষা

১৪) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে 'টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়' এবং 'আর্যভট্ট আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়' নামক ২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিপুরাতে তাদের কার্যক্রম চালু করেছে।

১৫) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে উদয়পুরে বেসরকারি উদ্যোগে 'মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়' স্থাপন করা হবে।


যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া

১৬) রাজ্য সরকার বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলাকে সব অংশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার প্রয়াস করছে, যাতে সমস্ত অংশের মানুষের সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত হয়। সিন্থেটিক টার্ফ সম্বলিত ফুটবল মাঠ, বহুমুখী ক্রীড়া ভবন, অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক, সিন্থেটিক হকির মাঠ, সুইমিং পুল এবং ওপেন জিমন্যাসিয়ামের মত ক্রীড়া পরিকাঠামো রাজ্যের
বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হচ্ছে। এইসব উন্নত পরিকাঠামো ব্যবহার করে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকস্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সাথে অংশগ্রহণ করতে পারছে এবং বিভিন্ন পদক অর্জন করতেও সফলতা লাভ করছে।

১৭) এই প্রসঙ্গে আমি আনন্দের সাথে আপনাদের অবগত করতে চাই যে, আগরতলায় অনুষ্ঠিত জাতীয় স্কুল খেলার প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে রাজ্যের ছেলেয়েমেরা ৬টি স্বর্ণপদক, ২টি রৌপ্যপদক এবং ১টি ব্রোঞ্জপদক জয় করেছে। এছাড়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৬৭তম জাতীয় স্কুল খেলার প্রতিযোগিতায় ২টি স্বর্ণপদক এবং ১টি রৌপ্য পদক জয় করেছে। পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত ৬৭তম জাতীয় স্কুল খেলার প্রতিযোগিতায় রাজ্যের অংশগ্রহণকারীরা ৩টি রৌপ্য পদক জয় করেছে।

স্বাস্থ্য

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

১৮) আমি মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়কে এই সুযোগে 'মুখ্যমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনা'- ২০২৩ বাস্তবায়নের জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই, যার সূচনা ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে করা হয়েছে। এই পরিকল্পনাটি আমাদের রাজ্যের প্রতিটি নাগরিকের জীবনে সদর্থক প্রভাব ফেলবে। এই যোজনাটি প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনার সাথে সাথে রাজ্যের ১০০ শতাংশ জনগণকেই স্বাস্থ্য বীমার আওতায় নিয়ে আসবে।

১৯) রাজ্য সরকার রাজ্যের সব অংশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সুদৃঢ় করে তোলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। পানিসাগর, কুমারঘাট ও করবুকের ৩টি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র (সিএইচসি)-কে মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে।

২০) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতাল পরিসরে ২০০ শয্যা সম্বলিত মাল্টি কেয়ার স্বাস্থ্য ইউনিট নির্মাণ করা হবে ১৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে পিএম- ডিভাইনের আওতায়। কাঞ্চনপুর ও অমরপুরে মহকুমা হাসপাতাল পরিসরগুলিতে স্টাফ কোয়ার্টার্স নির্মাণ করা হবে ১১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে 'সুবর্ণজয়ন্তী ত্রিপুরা নির্মাণ যোজনার' আওতায়। সিপাহীজলাতে ১টি এককৃত নেশামুক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে ৮৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পিএম-ডিভাইনের আওতায়।

খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতা অধিকার

২১) ২০১৪-২৫ বর্ষে স্মার্ট পিডিএস (স্কিম ফর মর্ডানাইজেশন অ্যান্ড রিফর্মস থো
খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতা অধিকার

২১) ২০২৪-২৫ বর্ষে স্মার্ট পিডিএস (স্কিম ফর মর্ডানাইজেশন অ্যান্ড রিফর্মস থ্রো টেকনোলজি ইন পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম) প্রকল্পের আওতায় রাজ্যে স্মার্ট গণবণ্টন ব্যবস্থা চালু করা হবে ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায়। সেইসঙ্গে রাজ্যের সবক'টি রেশনশপে সুবিধাভোগীদের অথেন্টিকেশন প্রক্রিয়া নিরবচ্ছিন্ন করে তোলার জন্য সিস্টেম ইন্টিগ্রেটেড ইলেকট্রনিক পরিমাপ যন্ত্র ও আইরিস স্ক্যানার স্থাপন করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।

তপশিলি জাতি কল্যাণ

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

২২) রাজ্য সরকার সমাজের সমস্ত অংশের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তপশিলি জাতি সমূহের সামগ্রিক কল্যাণ রাজ্য সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। 'প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনার' আওতায় রাজ্যের ৩০টি তপশিলি জাতি অধ্যুষিত গ্রামকে আদর্শ গ্রামে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে 'প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনার' আওতায় রাজ্যের ৩২টি তপশিলি জাতি অধ্যুষিত গ্রামের উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

২৩) ১৪ হাজার ৩৫৯ জন ছাত্রছাত্রীকে ৫৭ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রাক্সাধ্যমিক মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে এবং ২ হাজার ৮১৬ জন ছাত্রছাত্রীকে ড. বি আর আম্বেদকর মেধা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ১৯ লক্ষ ১১ হাজার টাকা ব্যয়ে।

২৪) তাছাড়া 'ত্রিপুরা তপশিলি জাতি উন্নয়ন কো-অপারেটিভ লিমিটেড' ১৭৭ জন তপশিলি শিল্প উদ্যোগীকে নতুন শিল্পোদ্যোগ শুরু করার জন্য ভর্তুকি সম্বলিত ঋণ প্রদান করেছে, যাতে তারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারেন। ৪০০ জন তপশিলি ছাত্রছাত্রীকে ১ লক্ষ টাকা করে এককালীন সহায়তা দেওয়া হবে। এই উদ্দেশ্যে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

ওবিসি কল্যাণ

২৫) আমাদের রাজ্য সরকার সমস্ত অনগ্রসর সম্প্রদায়সমূহের উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে এবং সেই কারণে ওবিসি সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন আয়ের উৎস সৃষ্টিকারী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

২৬) মেধাবী ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের রাজ্যের কোষাগার থেকে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ১৫ হাজার ৮০২ জনকে প্রাক্-মাধ্যমিক বৃত্তি, ১৪ হাজার ৭২৮ জনকে মাধ্যমিকোত্তর বৃত্তি এবং ২ হাজার ৭৯ জন ওবিসি ছাত্রছাত্রীকে ড. বি আর আম্বেদকর মেধা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১০ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য ও ওবিসি বেকার যুবাদের ব্যবসা করার জন্য সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ৪৬ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এতে ২ হাজার ৭৩৬ জন ওবিসি অংশের মানুষ এতে উপকৃত হয়েছেন।

সংখ্যালঘু উন্নয়ন

২৭) আমাদের সরকার ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যপূরণে কার্যকরি অবদান রাখতে বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিকাশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে প্রতিটি সম্প্রদায়ের সর্বাঙ্গীণ বিকাশকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নের জন্য ২০২৩- ২৪ অর্থবর্ষে 'প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ কার্যক্রমের' আওতায় ২২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হয়েছে।

২৮) ২ হাজার ৬৪৩ জন ছাত্রছাত্রীকে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। ১,০৩৫টি সংখ্যালঘু পরিবারকে ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরু করার জন্য ভর্তুকি সম্বলিত ঋণ প্রদান করা হয়েছে এবং ২৯২ জন সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীকে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তুকি সম্বলিত ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ত্রিপুরা মাইনোরিটি কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড সর্বমোট ২২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার ঋণ প্রদান করেছে।

২৯) সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় অনুপ্রাণিত করার জন্য ভারত সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন স্কলারশিপের আওতায় সর্বমোট ২১ হাজার ৩৮৪ জন সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীকে ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। নারী শক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে ৪৮ হাজার ৯৬৯ জন সংখ্যালঘু ছাত্রীকে প্রিমেট্রিক ও পোস্টমেট্রিক স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে সর্বমোট ২ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে।

৩০) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বিভিন্ন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামে বিভিন্ন রকম উন্নয়নমূলক কাজের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং এই উদ্দেশ্যে 'প্রধানমন্ত্রী জনবিকাশ কার্যক্রমের' আওতায় ৩৫ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

৩১) রাজ্য সরকার সামাজিক সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। ৩৩টি সামাজিকভাতা প্রকল্পের অধীনে থাকা ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৩৬ জন সুবিধাভোগীর জন্য সামাজিক পেনশনভাতা প্রতি প্রাপক পিছু মাসিক ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে মাসিক ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। 'মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক সহায়ক প্রকল্পের আওতায় ১ জানুয়ারি, ২০২৪ থেকে আরও ২৯ হাজার ৪১০ জন নাগরিকের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে, যার জন্য অতিরিক্ত ৭০ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা প্রতি বছর ব্যয় হবে।

৩২) নারী শক্তির বিকাশের লক্ষ্যে কর্মরতা মহিলাদের জন্য ৪টি হোস্টেল নির্মিত হচ্ছে। 'প্রধানমন্ত্রী মাতুবন্দনা যোজনা' (পিএমএমভিওয়াই)-এর আওতায় ৬ হাজার ৪৮৪ জন গর্ভবতী ও স্তন্যদায়িনী মাকে আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। ভারত সরকারের 'মিশন শক্তি'র আওতায় আমি মাতাবাড়ি ও তেলিয়ামুড়ায় অতি দরিদ্র অসহায় মহিলাদের জন্য ২টি 'শক্তি সদন' স্থাপন করার প্রস্তাব রাখছি, যার জন্য সর্বমোট ব্যয় ধার্য করা হয়েছে ১০ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা।

জনজাতি কল্যাণ

৩৩) মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় বিভিন্ন জনজাতি নেতৃত্বের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে রাজ্য সরকার গত ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে 'জনজাতি গৌরব দিবস' উদযাপন করেছে।

৩৪) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে 'মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশনের' আওতায় ৬০০ হেক্টর জমিতে রাবার গাছ রোপণ করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বিভিন্ন আয়ের উৎস সৃষ্টিকারী কর্মকান্ড সম্পাদনের মাধ্যমে ৯১৬টি জনজাতি পরিবার লাভবান হয়েছে এবং ৯০টি জনজাতি পরিবারকে অটোরিক্সা ও পাওয়ারটিলার প্রদান করা হয়েছে। 'প্রধানমন্ত্রী আদি আদর্শ গ্রাম যোজনার' আওতায় ১৯৮টি গ্রামের উন্নয়নের পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে, যার জন্য ৪০ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয় ধার্য হয়েছে।

৩৫) বিদ্যালয়স্তরে ককবরক ভাষার প্রসারের লক্ষ্যে ১ হাজার ৪১৭টি বিদ্যালয়ে ককবরক ভাষা চালু করা হয়েছে। মোট ৯৩ হাজার ৩৯৫ জন তপশিলি জনজাতি ছাত্রছাত্রীকে বিভিন্ন মেধাবৃত্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, যার জন্য ব্যয় ধার্য হয়েছে ৮৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা।

৩৬) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বিভিন্ন জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় রাবার শিটের প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ৫০টি স্মোক হাউস নির্মাণ করা হবে এবং এই প্রকল্পের ব্যয় ধার্য হয়েছে ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। ২০২৪-২৫ বর্ষে তপশিলি জনজাতি ছাত্রীদের জন্য ১১টি এবং তপশিলি জনজাতি ছাত্রদের জন্য ১০টি ৫০ আসন বিশিষ্ট হোস্টেল নির্মাণ করা হবে ৭৬ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে তীর্থমুখ মেলা প্রাঙ্গণের পরিকাঠামোর উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে ১৫ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে।

৩৭) প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী ন্যায় মহা অভিযান (পিএম-জনমন)-এর উদ্দেশ্য হল বিশেষভাবে প্রান্তিক ও দুর্বল জনজাতি গোষ্ঠীসমূহের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবিকার ক্ষেত্রে থাকা ব্যবধানগুলির অবসান 
৩৮) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে পিএম-জনমনের আওতায় আদিম ও প্রান্তিক জনজাতি গোষ্ঠী অধ্যুষিত সমস্ত জনপদে বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করা হবে এবং তারজন্য ৬৯ কোটি ১২ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।
৩৯) ২০২৪-২৫ বর্ষে আদিম ও প্রান্তিক জনজাতি অংশের নাগরিকদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে এমন জনপদগুলিতে ৭৭টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, ৯ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পিএম-জন্মনের আওতায়।

৪০) 'প্রধানমন্ত্রী জনমন যোজনার' আওতায় রিয়াং সম্প্রদায়ের জনজাতি পরিবারবর্গের জন্য ৯ হাজার ১৫টি নতুন গৃহ নির্মিত হয়েছে। এই যোজনা বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা ভারত সরকারের কাছ থেকে ৪৩ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা পেয়েছি।

৪১) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য রাজ্য সরকার সর্বমোট ৬৯৮ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা টিটিএএডিসি-কে প্রদান করবে, যা ২০২৩-২৪ সালের বাজেট বরাদ্দের চাইতে অনেকটাই বেশি। এই অর্থরাশি টিটিএএডিসি এলাকার ভিলেজ কাউন্সিলগুলির জন্য ৫ম রাজ্য অর্থকমিশনের আওতায় করের ভাগ হতে প্রদেয় অর্থ থেকে পৃথক এবং অতিরিক্ত। এছাড়াও জনজাতি সাব প্ল্যানের আওতায় (টিটিএএডিসি-কে প্রদত্ত অর্থরাশি সহ) রাজ্য সরকার আমাদের জনজাতি ভাই-বোনদের কল্যাণের জন্য ৫ হাজার ৮৯৯ কোটি ৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করছে, যা সর্বমোট বিকাশ বরাদ্দের ৩৯.৯৩ শতাংশ।

গ্রামোন্নয়ন

৪২) বিগত ৫ বছরে 'প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণের' আওতায় রেকর্ড সংখ্যক ৫ লক্ষ গৃহ নির্মিত হয়েছে। আমি ভারত সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে আমাদের রাজ্যের গ্রামীণ ভাই-বোনদের জন্য উদার হস্তে গৃহ বরাদ্দ করার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।

৪৩) বিগত ৫ বছরে 'ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের' আওতায় রাজ্যে ৪৭ হাজার ৬০০টি মহিলা স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের সর্বমোট ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার গ্রামীণ মহিলা ৫১ হাজার ২৫৪টি স্বসহায়ক দলের সাথে যুক্ত রয়েছেন। এই স্বসহায়ক দলগুলি ২ হাজার ৯৪টি গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান (ভিও) এবং ১০২টি ক্লাস্টারস্তরীয় ফেডারেশনের সাথে যুক্ত। জানুয়ারি, ২০২৪ সাল অব্দি বিভিন্ন স্বসহায়ক দলের সাথে যুক্ত ৮৩ হাজার মহিলা 'লাখপতি দিদি' হয়েছেন। রাজ্য সরকার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে যে, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের মধ্যে আরও ১ লক্ষ ১৪ হাজার মহিলাকে স্বসহায়ক দলের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ টাকারও বেশি বৃদ্ধি করা হবে।

৪৪) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকার সকল বিডিওদের জন্য নতুন গাড়ির ব্যবস্থা করবে, যার জন্য ব্যয় ধার্য করা হয়েছে ৭ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। আমি সেইসঙ্গে যেখানে যেখানে সরকারি আবাসন নেই সেই সমস্ত স্থানে বিডিও, অ্যাডিশনাল বিডিও ও এডিএম-দের জন্য সরকারি আবাসন নির্মাণের প্রস্তাব রাখছি।

গ্রামোন্নয়ন (পঞ্চায়েত)

৪৫) আমি এই মহতী সভাকে আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, রাজ্য সরকার পঞ্চম রাজ্য অর্থকমিশনের সুপারিশ গ্রহণ করেছে। পঞ্চম রাজ্য অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০২৪-২৫ বর্ষে রাজ্য সরকার ৯৪ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা করের ভাগ হিসেবে, ৫ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা করের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে এবং ১০ কোটি টাকা গ্র্যান্ট-ইন- এইড হিসেবে রুরাল লোকাল বডিগুলিকে দেওয়া হবে।
৪৬) আমি এই মহতী সভাকে আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, ভারত সরকার আমাদের বিভিন্ন পঞ্চায়েতীরাজ প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। অসাধারণ অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ভারত সরকারের পঞ্চায়েতরাজ মন্ত্রক দ্বারা কুমারঘাট ব্লক উপদেষ্টা কমিটি 'নানাজি দেশমুখ সর্বোত্তম পঞ্চায়েত সতত বিকাশ পুরস্কার' এবং রূপাইছড়ি আরডি ব্লকের অন্তর্গত বাগমারা ভিলেজ কমিটি 'কার্বন নিউট্রাল বিশেষ পঞ্চায়েত' পুরস্কারে (স্পেশাল ক্যাটাগরি) ভূষিত হয়েছে।


পানীয়জল

৪৭) নিরাপদ পানীয়জল সরবরাহ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের অগ্রাধিকার। রাজ্য সরকার অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে জল জীবন মিশন বাস্তবায়ন করছে। জল জীবন মিশনের পূর্বে মাত্র ২৪ হাজার ৫০২টি (৩.৩০ শতাংশ) গ্রামীণ পরিবারকে পানীয়জল সরবরাহের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। তারপর ২০১৯ সালে জল জীবন মিশন চালু হওয়ার পর সর্বমোট ৫ লক্ষ ৭২ হাজার ৭৯৩টি (৭৬.৮১ শতাংশ) গ্রামীণ পরিবারকে কার্যকরী পানীয়জল সংযোগ অর্থাৎ ফাঙ্কশনাল হাউসহোল্ড ট্যাপ কানেকশনস (এফএইচটিসি) দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার জল জীবন মিশনের আওতায় গত ৪ বছরে ২ হাজার ৫৪৫ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে।

স্বচ্ছতা (স্যানিটেশন), পরিচ্ছন্নতা (ক্লিনলিনেস) ও সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ (অ্যাসেটস মেনটিন্যান্স)

৪৮) আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা মহোদয়ের অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় স্বচ্ছতা, জনপরিসরের পরিচ্ছন্নতা ও সরকারি সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি দিক নির্দেশকারী প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেটে একটি নতুন ডিমান্ড সৃষ্টি করা হয়েছে শুধুমাত্র স্যানিটেশন খাতের জন্য। ১৩৯ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকার ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা নজিরবিহীন।

বন

৪৯) বন বিভাগ বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা এবং রাজ্যের উন্নয়নের জন্য মূল্যবান বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ সরবরাহ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে রাজ্যে ২টি বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে যার একটি হল 'জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি' (জাইকা ২.০), অপরটি হল 'ইন্দো-জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন' (আইজিডিসি ২.০)। তাছাড়া বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় 'এনহান্সিং ল্যান্ডস্কেইপ অ্যান্ড ইকোসিস্টেম ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট' (এলিমেন্ট) নামে আরেকটি নতুন প্রকল্প ১ হাজার ৭৬৪ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শীঘ্রই চালু করা হবে।

৫০) আগরজাত পণ্য বাণিজ্যের স্বার্থে আগরতলাতে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ৫ তারিখ থেকে ৭ তারিখ অব্দি 'তৃতীয় আন্তর্জাতিক ক্রেতা-বিক্রেতা বৈঠক' অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্মনগরে আগরচাষীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমি আপনাদের আনন্দের সাথে অবগত করাতে চাই যে, এই প্রথম ভারত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক (এমওইএফসিসি) ত্রিপুরা থেকে দুবাইতে আগর তৈল রপ্তানি করার অনুমতি দিয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তি

৫১) সমস্তরকম ব্যবস্থার মধ্যে সুশাসনের নতুন দিগন্তের সূচনার জন্য রাজ্যে ডিজিটাল উদ্যোগ সমূহে ব্যাপকভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। তারই অঙ্গ হিসেবে গত ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে ই-ক্যাবিনেট চালু করা হয়েছে। ই-ক্যাবিনেটের উদ্দেশ্য হল সরকারের সর্বোচ্চস্তরে গতিশীল ও স্বচ্ছ কর্মপ্রক্রিয়ার সম্পাদন সুনিশ্চিত করা এবং একটি সরল দায়বদ্ধ, সক্রিয় এবং স্বচ্ছ কার্যপ্রণালীর মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্য সম্পন্ন করা। ত্রিপুরা হল দেশের সামান্য কয়েকটি রাজ্যের অন্যতম যেখানে ই-ক্যাবিনেট চালু করা হয়েছে। রাজ্য সরকার শাসন পরিচালনায় কর্মদক্ষতা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাগজবিহীন ই-অফিস বাস্তবায়ন করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে জেলাস্তরের কার্যালয়সমূহ সহ রাজ্যস্তরের সমস্ত দপ্তরে ই-অফিস বাস্তবায়িত হয়েছে। ই-অফিসের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে সমস্ত মহকুমা শাসকদের কার্যালয় ও সমস্ত ব্লক কার্যালয়।

৫২) রাজ্যের সমস্ত অংশে ফোর-জি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার ১২৫টি টাওয়ারের জন্য বিএসএনএল-কে ২ হাজার বর্গফুট দখল মুক্ত (এনকামব্রেন্স ফ্রি) জমি ব্যবহার করার জন্য নো অবজেকশন সার্টিফিকেট প্রদান করেছে। রাজ্য সরকার রাজ্যের ৫৮টি ব্লকের প্রতিটিকে মোবাইল কমিউনিটি সার্ভিস ভ্যান পরিষেবা প্রদান করেছে। সমস্ত ব্লক ও মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের
পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ত্রিপুরা রাজ্যে ভারতনেট পরিষেবাকে সম্প্রসারিত করার মাধ্যমে ডাটা সেন্টারের পরিকাঠামোর বৃদ্ধি সাধন, এইচএসডব্লিউএএন এবং আইপি টেলিফোন পরিষেবা (হরাইজন্টাল স্টেট ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ইন্টারনেট ফোন)-এর বিস্তার আর উন্নীতকরণ, রাজ্যের সমস্ত থানায় সিসিটিভি নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা, অর্থ দপ্তর ও রাজস্ব দপ্তরের তথ্য প্রযুক্তি পরিকাঠামোর উন্নীতকরণ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৫০টি এফটিটিএইচ পরিষেবা (ফাইবার টু হোম) সংযোগ এবং তৎসঙ্গে ৩০০টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও এডিসি ভিলেজে ১টি করে পাবলিক ওয়াইফাই হটস্পট পরিষেবা প্রদান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজ্যের মহাকরণের আইসিটি পরিকাঠামোর বৃদ্ধি ও উন্নীতকরণের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে সর্বমোট ৪৮ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

৫৩) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে 'মুখ্যমন্ত্রী যুব যোগাযোগ যোজনা'র আওতায় ১১ হাজার ৪৬৯ জন ছাত্রছাত্রীকে স্মার্ট ফোন দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে এবং এই ক্ষেত্রে ৫ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১৯ হাজার ছাত্রছাত্রীকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্মার্ট ফোন দেওয়া হবে।

স্বরাষ্ট্র (আরক্ষা)

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,

৫৪) রাজ্যের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে আইন শৃঙ্খলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য সরকার অপরাধের হার কমাতে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।


অগ্নিনির্বাপণ ও আপৎকালীন পরিষেবা

৫৫) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২৬ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অগ্নিনির্বাপক যানসমূহের জন্য ৫০টি কনভেনশনাল ওয়াটার টেন্ডার ও ২০টি লাইট অপারেশনাল গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। মনু বাজার, দামছড়া, অম্পি ও রইস্যাবাড়িতে স্থায়ী অগ্নি নির্বাপক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

৫৬) আমি আনন্দের সাথে আপনাদের জানাচ্ছি যে, ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ত্রিপুরা ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিস ট্রেনিং স্কুলটিকে ন্যাশনাল ফায়ার সার্ভিস কলেজ নাগপুরের রাজ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই উন্নীতকরণের ফলস্বরূপ অগ্নি নির্বাপক কর্মী সহ বিপর্যয় মোকাবিলায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ রাজ্যেই প্রদান করা সম্ভব হবে।

রাজস্ব

৫৭) রাজ্য সরকার 'ন্যাশনাল ল্যান্ড রেকর্ড মর্ডানাইজেশন' কর্মসূচির আওতায় জমির খতিয়ানের ডিজিটাইজেশনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। রাজ্য সরকারের এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে গত ১৮ জুলাই, ২০২৩ তারিখে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির দ্বারা ত্রিপুরা রাজ্য 'ভূমি সম্মান' পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।

৫৮) রাজ্য সরকার নাগরিকদের উন্নততর পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে অনেকগুলি নাগরিককেন্দ্রিক পরিষেবা চালু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ই-আরওআর পরিষেবা, অনলাইন ভূমি রাজস্ব, অনলাইন মিউটেশন এবং ডিমার্কেশনের জন্য অনলাইন মাধ্যমে পেমেন্ট পরিষেবা ইত্যাদি।

৫৯) প্রতিটি জমির প্লটকে ১টি করে 'ইউনিক ল্যান্ড পার্সেল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার' (ইউএলপিআইএন) দেওয়ার লক্ষ্যে 'ভূ-নক্সা' নামের একটি সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে। রাজ্য সরকার 'বন-অধিকার' নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে, যা বনাধিকারের পাট্টা ভূমির সীমা নির্ধারণে ব্যবহৃত হবে।

৬০) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে, 'সার্ভে অব ভিলেজেস আবাদি অ্যান্ড ম্যাপিং উইথ ইমপ্রোভাইসড টেকনোলজি ইন ভিলেজ এরিয়াস' (SVAMITVA) যোজনার আওতায় এবং সার্ভে অব ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় রাজ্য সরকার সমস্ত বিদ্যমান রাজস্ব মানচিত্র হালনাগাদ করার জন্য ড্রোন চালনা করে জমির জরিপ করবে।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ

৬১) রাজ্য সরকার শিশু কিশোর ও তরুণ তরুণীদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বিকশিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। উত্তর ত্রিপুরা ও ঊনকোটি জেলায় ২টি ভ্রাম্যমান ইনফ্ল্যাটেবল তারামন্ডল স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া সুকান্ত একাডেমিতে শিশু বিজ্ঞান গ্যালারি এবং একটি মজার বিজ্ঞান গ্যালারি নির্মাণ করা হয়েছে। মহাবিদ্যালয়ভিত্তিক ৪০ (চল্লিশ)টি ডিএনএ ক্লাব এবং ৪(চার)টি জৈব প্রযুক্তি ক্লাব চালু করা হয়েছে বিভিন্ন মহাবিদ্যালয়ে।

৬২) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৬টি 'বায়োভিলেজ' ও ৩টি 'মাশরুম হ্যামলেট' তৈরি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় রাজ্য 'State Action Plan of Climate Change (SAPCC 2.0)' তৈরি করা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এর সূচনা করা হয়েছে।

৬৩) ২০২৪-২৫ বর্ষে, ৪(চার)টি মহাবিদ্যালয়ভিত্তিক জৈব প্রযুক্তি ক্লাব, ৫০টি ডিএনএ ক্লাব, ৬টি বায়োভিলেজ ও ৫টি মাশরুম হ্যামলেট গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখছি। রাজ্য সরকার পরিবেশের উপর একক ব্যবহারজনিত প্লাস্টিকের কারণে পড়া ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ব্যাপক প্রচার সংঘটিত করবে। ত্রিপুরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ঘোষিত সাইলেন্স জোনগুলিতে যানবাহনের হর্ন সহ ডিজে ইত্যাদি উচ্চমাত্রার শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ উদ্যোগে নেবে। বিভিন্ন অভয়ারণ্যের নিকটে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।


শিল্প ও বাণিজ্য

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়

৬৪) ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ৩৯০ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৭৫৮ কোটি ৯ লক্ষ টাকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে সর্বমোট ১২১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা মূল্যের রপ্তানি হয়েছে।

৬৫) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে প্রাইম মিনিস্টার্স এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম (পিএমইজিপি) এবং 'স্বাবলম্বন' প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন স্বরোজগারী কর্মসংস্থান উদ্যোগের জন্য ২৫ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

৬৬) আমি একটি ভূমি ব্যাঙ্কও চালু করার প্রস্তাব রাখছি, যার আওতায় অব্যবহৃত সরকারি জমিসমূহের উন্নীতকরণ হবে। তারপর সেই উন্নত জমি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে লিজ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে সরকারি জমির আশেপাশে থাকা বেসরকারি জোত জমিও ক্রয় করা হবে এবং সেই জমি সরকারি জমির মত করেই উন্নীতকরণ করা হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।

৬৭) ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইউনিটি মল নির্মাণের কাজ চলছে, যেখানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের চিরাচরিত হস্তকারু, হস্ততাঁত ও বস্ত্র ইত্যাদি প্রদর্শন, বিপণন ও বিক্রয় করা হবে।

[19]

দক্ষতা বিকাশ

৬৮) রাজ্য সরকার যুবশক্তির দক্ষতা বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, যাতে যুবারা বিভিন্ন পেশায় দক্ষ হয়ে জীবিকা অর্জনের জন্য নিজেরা ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করতে পারে।

৬৯) প্রথাগত প্রশিক্ষণ দেওয়া ছাড়াও ১টি কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এই উদ্দেশ্যে ৩০ জন যুবাকে ১ মাসব্যাপী জাপানি ভাষা শেখার একটি দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শিবিরে দিল্লি পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া ৩০ জন মহিলাকে আয়া নার্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২০ জন মহিলাকে অটোরিক্সা চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ২০০ জন পুরুষ ও মহিলাকে নবজাত শিশুর পরিচর্যার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

তথ্য ও সংস্কৃতি

৭০) রাজ্য সরকার রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির প্রসারের জন্য বিভিন্ন শিল্পীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেবে। তালিকাভুক্ত এবং অসাধারণ প্রতিভার শিল্পীদের আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে।

৭১) রাজ্য সরকার রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির বিকাশ এবং সেইসঙ্গে জনমানসে দেশাত্মবোধের চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রথমবারের মত অডিশনের মাধ্যমে তরুণ শিল্পীদের প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের' অঙ্গ হিসেবে '৭৫ সীমান্ত গ্রাম ক্রান্তি বীরো কে নাম', 'মেরি মাটি মেরা দেশ' এবং 'হর ঘর তিরঙ্গার' মত অনুষ্ঠানগুলি রাজ্যজুড়ে ব্যাপক উৎসাহের সাথে উদযাপিত হয়েছে।

[20]

পরিবহণ

৭২) বিগত কয়েক বছরে রাজ্যের যোগাযোগ ও পরিবহণ ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন

সাধিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য আগরতলা রেলস্টেশন থেকে

অনেকগুলি নতুন ট্রেনের সূচনা করা হচ্ছে। আমি এই অবসরে আগরতলা থেকে অযোধ্যা যাওয়ার একটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা এবং মাতা ত্রিপুরাসুন্দরীর ভূমি থেকে অযোধ্যা ভূমিতে যাওয়ার সুগম ব্যবস্থা করে রাজ্যবাসীকে রামলালা দর্শনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সমস্ত ত্রিপুরাবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজিকে আন্তরিকভাবে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

৭৩) ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজি এবং বাংলাদেশের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে যুগ্মভাবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। আশা করা যাচ্ছে যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই নবনির্মিত রেললাইনে ট্রেন পরিষেবা চালু যাবে।

৭৪) আমি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজিকে 'অমৃত ভারত প্রকল্পের' আওতায় আগরতলা রেল স্টেশনের পুনর্বিকাশের সূচনা করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

পূর্ত বিভাগ (সড়ক ও সেতু)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ