Advertisement

Responsive Advertisement

রাজ্যে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার পাশাপাশি নজরদারি জোরদার করতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২৯ ডিসেম্বর: রাজ্যে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার পাশাপাশি সর্তকতা বাড়ানো ও নজরদারি ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও আরও অধিক নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আজ সচিবালয়ে ত্রিপুরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ভয় মানিক সাহা একথা বলেন। পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী শব্দ, বায়ু, জল দূষণ রোধ সহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে পর্যদের নজরদারির রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, শব্দ দূষণ এক বিরাট সমস্যা। দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানে স্কুল ও কলেজের ইকো ক্লাবগুলিকে কাজে লাগাতে হবে। শব্দ দূষণ রোধ করতে গেলে বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ সহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে মাইকের শব্দ নিয়ন্ত্রিত রাখার ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে আবেদন জানাতে হবে। হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য জনবহুল স্থানে যাতে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো না হয় তার জন্য জেলা ও আরক্ষা প্রশাসনের সহায়তায় নজরদারি ব্যবস্থা আরও কঠোর করতে মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন।
পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার সুইমিং পুলের জন নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে জল পরীক্ষার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সরকারী মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের ল্যাবরেটরী ব্যবহার করা যেতে পারে। সুইমিং পুলের জল থেকে যাতে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক ঘটিত রোগের সংক্রমণ না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, একক ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করার ক্ষেত্রে প্রথমে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আরো কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা ধারাবাহিকভাবে রাখা দরকার। বাইরের রাজা থেকে যাতে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যাগ রাজ্যে ঢুকতে না পারে সেজন্য বিশেষ তল্লাসী অভিযান করা দরকার। এছাড়া বড় বড় বাজারগুলিতে নিয়মিত অভিযান, নজরদারি ব্যবস্থা ধারাবাহিকভাবে চালু রাখলে ধীরে ধীরে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকে ব্যবহার হ্রাস পাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে চট, কাপড়, পাতা ও কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করার জন্য সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এসব বিষয়ে জনসচেতনতার সৃষ্টির লক্ষ্যে শহরে এল ই ডি স্ক্রিনগুলিতে ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করেন।
পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে প্লাস্টিকের উৎসস্থল থেকে সরবরাহের লাইনকে বন্ধ করার পরামর্শ দেন। বর্তমানে পিকনিকের মরশুমে সিপাহীজলা অভয়ারণ্যসহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে যাতে উচ্চস্বরে মাইক না বাজানো হয় সেদিকে নজর দেওয়ার বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেন।
পর্যালোচনা বৈঠকে ত্রিপুরা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. কে শশী কুমার পর্ষদের বর্তমান কাজকর্মের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন এবং ভবিষ্যৎ কাজকর্মের রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি জানান, রাজ্যে প্রায় ১,৯১০টি প্রাকৃতিক জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১,৩০০টি জলাশয়ের জল পরীক্ষা করা হয়েছে। শব্দ, জল ও বায়ু দূষণ রোধে দপ্তর নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষার পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান সংগঠিত করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার রোখে নগরোন্নয়ন দপ্তর, পঞ্চায়েত, শিল্প ও বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, আই টি দপ্তর সহ সমস্ত নগর শাসিত সংস্থা এবং জেলা ও মহকুমা প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করছে। তিনি জানান, রাজ্যে বর্তমানে ১,১০০টি স্কুলে ইকো ক্লাব রয়েছে এবং ২৮টি ইকো ক্লাব কলেজস্তরে রয়েছে। এই সব ইকো ক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমে বার্ষিক ক্যালেন্ডার অনুসারে বিভিন্ন দিবস উদযাপনের পাশাপাশি সচেতনতামূলক প্রচার, ওয়াকশপ, প্রশিক্ষণের কাজ করা হচ্ছে। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য বায়ো-ডিগ্রেটেল উপাদানের ৪টি শিল্প ইউনিট স্থাপিত হচ্ছে এবং ২টি ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয়েছে। একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে সচেতনতামূলক প্রচার কাজে ইকো ক্লাবগুলিকে পর্ষদের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। সচিবালয়ের ২ নং সভা কক্ষে আয়োজিত আজকের এই পর্যালোচনা বৈঠকে দূষণ নিয়ন্ত্রণের পর্ষদের সদস্য সচিব বিশু কর্মকার, এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মানস মুখার্জী এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দপ্তরের অধিকর্তা অনিমেষ দাস সহ পর্ষদের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ