আগরতলা, ২৮ নভেম্বর: গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে স্বসহায়ক দলগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি হলেই দেশ ও রাজ্যের অর্থনীতিতে গতি আসবে। আজ আগরতলার সুকান্ত একাডেমীতে ইউকো ব্যাঙ্কের উদ্যোগে স্বসহায়ক দলের শিবির ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের স্বসহায়ক দলগুলির মহিলা সদস্যরা আজ আত্মনির্ভরতার পথ দেখছে। মহিলাদের আত্মনির্ভরতার মাধ্যমেই আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ে উঠবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চিন্তাধারা গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ ঘটানো। সেই মার্গ দর্শনেই রাজ্যের বর্তমান সরকার কাজ করছে। বর্তমানে রাজ্যের স্বসহায়ক দলগুলি খুবই ভাল কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের এই কর্মসূচিতে স্বসহায়ক দলগুলিকে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কের আগরতলা শাখার পক্ষ থেকে ১৩০টি স্বসহায়ক দলের অ্যাকাউন্টে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯৫টি নতুন স্বসহায়ক দলকে প্রথম পর্যায়ে ক্রেডিট লিঙ্কেজে যুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া ৩৫টি স্বসহায়ক দলকে ২য় ও ৩য় পর্যায়ে ক্রেডিট লিখেছে যুক্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ইউকো ব্যাঙ্কের এই শাখা থেকে স্বসহায়ক দলগুলিকে ২ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সহায়ক দলগুলির সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে বলেন, গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের আত্মনির্ভর করে তুলতে ভারত সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মাধ্যমে কাজ করে চলছে। দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীনে স্বসহায়ক গোষ্ঠিগুলিকে ভিলেজ অর্গানাইজেশন ও ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশনের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন রাজ্যে বর্তমানে রাজ্যে ৫১ হাজার ২৫৪টি স্বসহায়ক দলের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকার প্রায় ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার মহিলা যুক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ হাজার ১৬৪টি জনজাতি সম্প্রদায়ের মহিলা, ৯ হাজার ৬৮টি তপশিলী জাতিভুক্ত ৬ ২২ হাজার ২২২টি অন্যান্য ক্যাটাগরির মহিলা স্বসহায়ক দল রয়েছে। দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা- জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীনে ২,০৯৪ টি ভিলেজ অর্গানাইজেশন ও ১০২টি ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশন গঠন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত স্বসহায়ক দলগুলিকে প্রায় ৪০ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা রিভলভিং ফান্ড হিসাবে এবং কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড হিসাবে ৪৯৫ কোটি ২১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলারা আজ দারিদ্র দূরীকরণের বিরুদ্ধে ও তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বসহায়ক দলের সদস্যাদের মধ্যে ৮৪ হাজার ৪২৪ জন মহিলা "লাখপতি দিদি' হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। আগামী ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৯০ হাজার 'লাখপতি দিদি' করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্বসহায়ক দলগুলিকে সার্বিকভাবে মজবুত করতে মহিলা স্বসহায়ক দলগুলির মধ্যে আরও ৪০০ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ক্রেডিট নিস্তেজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্বসহায়ক দলের সদস্যদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য ১৪ হাজার ৩০৮টি মাইক্রো এন্টারপ্রাইজেস গড়ে তোলা হয়েছে। কৃষিভিত্তিক সহায়তা করার জন্য স্বসহায়ক দলের ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মহিলাকে কিষাণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পশ্চিম, ধলাই এবং সিপাহীজলা জেলায় ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীনে তিনটি জেলায় প্রায় ৬ হাজার স্বসহায়ক দলের মহিলা সদস্যদের শুকর পালন প্রকল্পের সাথে যুক্ত করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গোমতী, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা এবং ধলাই জেলার ২ হাজার মহিলা স্বসহায়ক দলের সদস্যদের ব্রয়লার পন্টিফার্মে যুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে ছয়টি জেলার ২৫টি ব্লকের ১২ হাজার মহিলা সদস্যাদের মৎস চাষের ক্লাস্টার এবং ৭টি জেলার ২১টি ব্লকের ৯ হাজার মহিলা সদস্যাদের ছাগল পালন ক্লাস্টারের আওতায় উন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সরকারি অর্থ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সরাসরি সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। এইক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং ডিজিটাল ভারত গড়ার স্বপ্নের মার্গ দর্শন। বর্তমান রাজ্যের সরকারও এই দিশায় কাজ করে চলছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সিইও-র হাতে ইউকো ব্যাঙ্কের দেওয়া ২ কোটি টাকার চেক তুলে দেন। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিভিন্ন মহিলা স্বসহায়ক দলের হাতে ইউকো ব্যাঙ্কের ঋণের টাকার চেক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আগরতলা জোনাল ম্যানেজার ইউকো ব্যাঙ্ক রাজু দাস। বক্তব্য রাখেন ইউকো ব্যাঙ্কের কার্যনির্বাহী অধিকর্তা ভি এন কামলে, জেনারেল ম্যানেজার ইউকো ব্যাঙ্ক রনজিৎ সিং। এছাড়াও উপস্থিত
ছিলেন ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের কার্যনির্বাহী আধিকারিক ড. ব্রমনিত কৌর।
0 মন্তব্যসমূহ