আগরতলা, ২৮ অক্টোবর: জনজাতি অংশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। তাদের উন্নয়নে যা যা করার দরকার সেটা করবে সরকার। এর পাশাপাশি ড্রাগস মুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। 
                                    ভারতীয় জনতা পার্টি ত্রিপুরা প্রদেশের উদ্যোগে আজ সিমনায় আয়োজিত এক যোগদান সভায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন আজ ১,৪০৬  জন ভোটার ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেছেন। 
                                   সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা সবসময় বলেন যে জনজাতিদের উন্নয়ন ছাড়া কোন কথা হবে না। জনজাতিদের উন্নয়নে সত্যিকার অর্থে কাজ করছেন তারা। জনজাতি অংশের প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্য হওয়ার পর আজ পর্যন্ত ত্রিপুরা থেকে রাজ্যপাল হওয়ার কথা শুনিনি আমরা। আর এই রাজন্য পরিবারের সদস্য জিষ্ণু দেববর্মাকে তেলেঙ্গানার মতো বড় রাজ্যের রাজ্যপাল করা হয়েছে। ত্রিপুরায় আমরা জাতি জনজাতি মিলে একাকার হয়ে আছি। তবে একাংশ আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াসে বিশ্বাস করে। সরকার ও পার্টি সেই দিশায় কাজ করছে।
                                     সভায় আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত একনাগাড়ে জনজাতি গোষ্ঠীর বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ - ২৫ সালে জনজাতি এলাকায় উন্নয়নের জন্য প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। শতকরা হিসেবে যা ৩৯.০৬ শতাংশ। ২০২৫ - ২৬ সালে বাজেটের প্রায় ৭,১৪৯ কোটি টাকা জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়। 
                                      মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উত্তর পূর্বাঞ্চল জোনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর ত্রিপুরার ক্ষেত্রে ২০২৪ এর ৪ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে এনএলএফটি ও এটিটিএফের সঙ্গে ত্রিপুরা সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সেখানে ২৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে। যাতে তাদের যথাযথ পুনর্বাসন দেওয়া যায়। ২০১৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার রাজ্যে আসার পর জনজাতি সমাজপতিদের সাম্মানিক ভাতা ২ হাজার টাকা করে দেওয়া শুরু হয়। কিছুদিন আগে ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই ভাতা বৃদ্ধি করে ৫ হাজার টাকা করা হয়। এছাড়াও জনজাতি গোষ্ঠীর উপ গোষ্ঠীর সমাজপতি বা প্রধানদেরও ৫ হাজার টাকা করে সাম্মানিক ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 
                                   সভায় বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, জনজাতিদের উন্নয়নে যা যা করার দরকার সেটা করবে বর্তমান সরকার। সেই দিশায় কাজ হচ্ছে। আগে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বছরে ৪০০ টাকা করে প্রি ম্যাট্রিক স্কলারশিপ দেওয়া হতো। সেই জায়গায় সেটা বাড়িয়ে ১,০০০ টাকা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি অনুপ্রবেশ মোকাবিলায়ও কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মহারাজাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহারাজা বীর বিক্রম কিশোরের নামে আগরতলা এয়ারপোর্টের নামকরণ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে মহারাজার একটি মর্মর মূর্তিও স্থাপন করা হয়েছে। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে ১৯ আগস্ট সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কামান চৌমুহনি সংলগ্ন আইল্যান্ডে মহারাজার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। 
                                   মুখ্যমন্ত্রী জানান, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় থাকা ব্লকগুলিকে অ্যাসপিরেশন্যাল ব্লক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে জনজাতিদের কল্যাণে আরো কাজ করা যায়। সেই হিসেবে এই ব্লকগুলিতে বাজেটে অধিক অর্থ বরাদ্দ করা হয়। আমাদের সরকার আসার পর গড়িয়া পুজোর ছুটি একদিন থেকে বাড়িয়ে দুদিন করা হয়েছে। সংগ্রঙমা পুজোর দিনটিকে রেষ্ট্রিক্টেড হলিডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জনজাতি ছেলেমেয়েদের গুণমান সম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে ২১টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরমধ্যে ১২টি চালু হয়েছে। আরো ৬টি আগামী বছরের মার্চের মধ্যে চালু হয়ে যাবে। এছাড়াও আরো ১৫টি একলব্য স্কুলের জন্য দিল্লি গিয়ে দাবি করে এসেছি। ব্রু রিয়াং শরণার্থীদের দীর্ঘ ২৩ বছরের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। জনজাতি জনগণের কল্যাণের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণে জেলা ও মহকুমা স্তরে আধিকারিক নিয়োগ করা হয়েছে। 
                                      সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, সদর গ্রামীণ জেলার সভাপতি গৌরাঙ্গ ভৌমিক, সিমনা মন্ডলের সভাপতি ইন্দ্রজিত দেববর্মা, জনজাতি মোর্চার সহ সভাপতি মঙ্গল দেববর্মা সহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব।
0 মন্তব্যসমূহ