Advertisement

Responsive Advertisement

১ জুলাই শুধু একটি তারিখ নয়, এটি ত্রিপুরার ইতিহাসের এক অধ্যায়": রতন লাল নাথ


আগরতলা, ২২ জুলাই: ত্রিপুরা বিধানসভার প্রতিষ্ঠার ৬২তম বর্ষপূর্তিতে রাজ্যের বিদ্যুৎ ও কৃষিমন্ত্রী রতন লাল নাথ আজ রাজ্যের গৌরবময় গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসের বহু অজানা অধ্যায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

আজ রাজ্য বিধানসভায় আয়োজিত 'ঐতিহাসিক জুলাই: ত্রিপুরা বিধানসভার পদচিহ্ন' কার্যক্রমে অংশ নিয়ে একথা বলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী যেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ড.) মানিক সাহা, বিধানসভা অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

মন্ত্রী বলেন এই দিনটি ক্যালেন্ডারের একটি তারিখমাত্র নয়, এটি ত্রিপুরার জীবন্ত ইতিহাসের একটি অধ্যায়।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে ত্রিপুরার বিধানসভার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে, তবে এর শিকড় প্রোথিত রয়েছে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের দূরদর্শী নেতৃত্বে। তিনি আধুনিক ত্রিপুরার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং সড়ক, হাসপাতাল, বিদ্যালয় এমনকি বিমানবন্দরের মতো পরিকাঠামোর উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।

মন্ত্রী বলেন মহারাজা বীর বিক্রমের মৃত্যুর পর রাজমাতা কাঞ্চনপ্রভা দেবী ত্রিপুরাকে ভারতীয় সংহতির সঙ্গে যুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৯ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর তিনি ভারতের সঙ্গে বিলয়পত্রে স্বাক্ষর করেন এবং ত্রিপুরা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অংশ হয়ে ওঠে।

তিনি জানান ত্রিপুরা ভারতের অংশ হওয়ার পর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষিত হয় এবং রণজিৎ রায়, ICS, হন প্রথম প্রধান কমিশনার। ১৯৬৩ সালের মে মাসে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ‘টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল অ্যাক্ট’ প্রণীত হয়। ভারতের সংবিধানের ২৩৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে একজন প্রতিনিধিত্বমূলক প্রশাসক নিযুক্ত হন এবং ৩০ জন নির্বাচিত ও ১ জন মনোনীত সদস্য নিয়ে গঠিত হয় ত্রিপুরা টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল।

মন্ত্রী আরও বলেন, ঠিক এই দিনেই শচীন্দ্র লাল সিংহ হন ত্রিপুরার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। এভাবেই শুরু হয় রাজ্যের গণতান্ত্রিক শাসনযাত্রা। টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলকে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রিপুরা বিধানসভায় রূপান্তরিত করা হয় ১৯৬৩ সালের ১ জুলাই।

তিনি জানান, প্রথম বিধানসভায় সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০, যা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। পরবর্তীতে, ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে সংসদে একটি আইন পাসের মাধ্যমে ত্রিপুরাকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা প্রদান করা হয়, যার ফলে রাজ্যবাসী পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার লাভ করেন।

মন্ত্রী ১৯৬৩ সালের প্রথম বিধানসভার নির্বাচিত কয়েকজন বিশিষ্ট নেতার নাম উল্লেখ করেন—মোহনপুর থেকে প্রমোদ রঞ্জন দাশগুপ্ত, আগরতলা থেকে শচীন্দ্র লাল সিংহ, পুরাতন আগরতলা থেকে হেমন্ত দেব, টাকারজলা থেকে বীরচন্দ্র দেববর্মা, বিশালগড় থেকে উমেশ লাল সিংহ, সোনামুড়া থেকে মনসুর আলি, খোয়াই থেকে নৃপেন চক্রবর্তী, তেলিয়ামুড়া থেকে প্রফুল্ল কুমার দাস, এবং ধর্মনগর থেকে করুণাময় নাথ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের বিধানসভার মাত্র পাঁচজন সদস্য আজও জীবিত আছেন যারা হলেন তাপস দে, লক্ষ্মী নাগ, অজয় বিশ্বাস, সমীর রঞ্জন বর্মণ ও সুশীল চৌধুরী।

বিধানসভার অবস্থান পরিবর্তনের ইতিহাস স্মরণ করে মন্ত্রী জানান, প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় আগরতলার পুরনো সচিবালয়ের সন্নিকটে—বর্তমানে যেখানে বীরচন্দ্র গ্রন্থাগার অবস্থিত। পরে অধিবেশন স্থানান্তরিত হয় ঐতিহাসিক উজ্জয়ন্ত প্রাসাদে। ২০১১ সালে, ৪৮ বছর পর, বর্তমান আধুনিক ভবনে স্থানান্তরিত হয় বিধানসভা।
মন্ত্রী বলেন এই নতুন ভবন শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি ত্রিপুরার জনগণের স্বপ্ন ও গণতন্ত্রের প্রতীক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ