Advertisement

Responsive Advertisement

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গোলমরিচ চাষ

গোলমরিচ বহুবর্ষজীবী লতানো গাছ।গোলমরিচকে সমস্ত মশলার রাজা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

গোলমরিচের উপযোগী জলবায়ু ও মাটিঃ উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া গোলমরিচ গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য উপযোগী। গোলমরিচ চাষের জন্য ২০০০-৩০০০ মিমি বৃষ্টিপাত এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০-৯৫% প্রয়োজন। ২৫° সেন্টিগ্রেড থেকে ৩০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা গোলমরিচ চাষের জন্য উপযুক্ত। বৃষ্টিপাতের সঠিক বন্টন, জল নিষ্কাশন এবং মাটির জল ধারণ ক্ষমতা মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। যখন গোলমরিচ গাছে ফুল ফোটা শুরু হয়ে যায় তখন সঠিক মাত্রায় ফল ধরার জন্য লাগাতর হালকা বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। ঐ সময়ে কিছু দিনের জন্যও যদি খরা থাকে তাহলে গোলমরিচের ছড়া ঝরে যাবে এবং ফলন কমে যাবে।
হালকা ঝুরঝুরে দোঁয়াশ বা বেলে মাটি যাতে জৈব পদার্থের মাত্রা বেশী এমন মাটি গোল মরিচ চাষের জন্য ভাল। জমিতে যাতে জল দাঁড়িয়ে না থাকে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। গোল মরিচের বৃদ্ধির জন্য ভাল জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মাটি যার P.H. (পি. এইচ), ৫ থেকে ৬- খুব ভাল মাটি হিসাবে বিবেচিত হয়।
জমি নির্বাচন: গোল মরিচ চাষের জন্য মাঝারি উঁচু জমি বা টিলা জমি নির্বাচন করা যেতে পারে। জমি নির্বাচন সঠিক হলে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব।
মাতৃগাছ নির্বাচন: গোল মরিচ চাষের জন্য বীচন লতা থেকে চারা তৈরী করতে হয়। চারা তৈরীর জন্য এমন মাতৃগাছ থেকে শাখা নিতে হবে যেগুলি ভাল ফলন দেয়, সুস্থ, সবল রোগাক্রান্ত নয় এবং
মাতৃগাছের বয়স যেন ৫-১২ বছর হয়।

গোল মরিচ গাছ বেয়ে উঠার জন্য আশ্রয় দান বা স্ট্যান্ডার্ড লাগানো: গোলমরিচের লতা বেয়ে উঠার জন্য গাছের ডাল বা স্ট্যান্ডার্ড গোল মরিচের চারা মূল জমিতে রোপণের আগে নির্দিষ্ট দূরত্বে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার গভীর সরু গর্তে লাগাতে হবে। ঢালু জমিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ঢালের আড়াআড়ি ২ মিটার রাখতে হবে। গোল মরিচের লতা বেয়ে উঠার জন্য ও ছায়া প্রদানের জন্য সাধারণতঃ মাদার, সুবাবুল বা সিলভার ওক, গ্লাইরিসিডিয়া ইত্যাদি গাছের ডাল স্টান্ডার্ড হিসাবে লাগানো হয়। গোলমরিচের জন্য লিভিং স্ট্যান্ডার্ড বা আশ্রয়দানকারী গাছ ৩-৪ বৎসর আগে লাগানো উচিত। যখন গোল মরিচের কাটিং লাগানো হবে তখন আশ্রয়দানকারী গাছের যথেষ্ট উচ্চতা হবে।

চারা লাগানোর দূরত্বঃ একক ফসল হিসাবে গোলমরিচের চাষ করলে সর্বাপেক্ষা অনুকূল দূরত্ব হচ্ছে ৩ মিঃ x ৩ মিঃ যাতে প্রতি হেক্টরে ১১০০ স্ট্যান্ডার্ড লাগানো যাবে। কিন্তু ঢালু জমিতে ৩ মি x ২ মি দূরত্বে গোলমরিচের কাটিং লাগানো যেতে পারে।
গোলমরিচের কাটিং বা চারা তৈরী (Propagation): ৫-১২ বৎসর বয়সের সুস্থ, সবল,
রোগমুক্ত ভাল ফলন দেয় এমন মাতৃগাছ থেকে বীচন লতা নিয়ে তিন রকম পদ্ধতিতে গোলমরিচের কাটিং বা চারা তৈরী করা হয়ে থাকে।

১। সাধারণ প্রচলিত পদ্ধতি বা (conventional method).
২। দ্রুত পরিবর্দ্ধন কারী পদ্ধতি বা (Rapid Multiplication method),
৩। সর্পিল পদ্ধতি বা (Serpentine Method)

১। সাধারণ প্রচলিত পদ্ধতি: ধাবক শাখা (Runner shoots) গুলোকে কুন্ডলী পাকিয়ে কাঠের খুঁটির উপর এমনভাবে রাখতে হবে যাতে মাটির সংস্পর্শে না আসে। ফেব্রুয়ারী মার্চ মাসে ২-৩ টি গাঁট আছে এমন আনুমানিক ২০ সেন্টিমিটারের টুকরো করে কাটাতে হবে। ধাবক শাখাগুলোর পাতা ফেলে দিতে হবে। শুধু পাতার ছোট বোটা টুকরো শাখায় লাগানো থাকবে ও প্রতিটি কাটিং এর উপরের দিকে একটি পাতা থাকবে।
কাটিংগুলোর নিচের দিকে কাটা অংশগুলো ইন্ডোল বিউটারিক অ্যাসিড (IBA)-১০০০ পিপিএম দ্রবণে ৪৫ সেকেন্ড ডুবিয়ে রাখলে শিকড় গজানোর হার বৃদ্ধি পাবে। মে জুন মাসে কাটিং গুলোতে যখন ৪-৫টি পাতা হবে তখন তা লাগানোর উপযুক্ত হবে।

২। দ্রুত পরিবর্দ্ধনকারী পদ্ধতিঃ গোলমরিচের ধাবক এবং প্রান্তিক শাখা অর্দ্ধেক করে কাটা (৮-১০ সেন্টিমিটার) ব্যাস সম্পন্ন বাঁশ ১.২৫ থেকে ১.৫ মিঃ লম্বা টুকরো করে কেটে নিয়ে গাটের মধ্যবর্তী অংশটুকু রেখে ৪৫° কোণ করে উভয় দিকে ছোট খুঁটির উপর বেধে দিতে হয়। প্রতিটি অর্ধেক করে কাটা বাঁশের জন্য একটি করে শিকড় যুক্ত কাটিং ট্রেঞ্চ এর মধ্যে লাগানো হয়। ট্রেঞ্চ যেটা কাটা হয় তার চওড়া ৩০ সেন্টিমিটার। গভীরতা ৪৫ সেন্টিমিটার এবং সুবিধামত লম্বা এবং মাটিঃবালিঃগোবর সার ১৪১৪১ এই অনুপাতে মিশিয়ে গর্ত পূর্ণ করতে হবে।
লাগানো কাটিং বেড়ে উঠার সাথে সাথে ব্যাম্বো Split অর্থাৎ অর্দ্ধেক করে কাটা বাঁশ রুটিং মিক্সচার, দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। গোবর সার (FYM), কয়ার ডাষ্ট (Coir dust) অর্থাৎ নারকেল ছিবড়া এবং বালি সমপরিমাণ মিশিয়ে রুটিন মিক্সচার তৈরী করা হয়। প্রতিটি গাটে শুকানো কলাগাছের বোঁটায় তৈরী দড়ি দিয়ে বেঁধে দিতে হয় যাতে করে প্রতিটি গাট রুটিং মিক্সচারের সংস্পর্শে আসে। জলসেচ দিতে হবে প্রয়োজন মত।
পুষ্টি দ্রবণ হিসাবে-ইউরিয়া-১ কেজি, সুপার ফসফেট-৭৫০ গ্রাম, মিউরিয়েট অব পটাস - ৫০০ গ্রাম এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ২৫০ লিটার জলে মিশিয়ে ফলিয়ার স্প্রে অর্থাৎ পাতায় স্প্রে করতে হবে। ০.১ শতাংশ গোবর বা Cowdung Solution স্প্রে প্রতিমাসে একবার গোলমরিচের লতার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গোলমরিচের লতা যখন বাঁশের মাথায় গিয়ে পৌঁছে তখন লতার অগ্রভাগ কেটে দিতে হবে এবং মাটি
থেকে তৃতীয় অথবা চতুর্থ গাঁটের কাছাকাছি লতাটিকে ছেঁচে (Crush) দিতে হবে যাতে কুঁড়িগুলো সক্রিয় হয় এবং ৭-১০ দিন পর ছেঁচে দেওয়া অংশে লতাটাকে কাটতে হবে এবং প্রতিটি কাটিং পলিথিন ব্যাগে বসাতে হবে যা ১ঃ১:১ অনুপাতে মাটিঃ বালিঃ F.Y.M. দিয়ে আগে থেকেই ভর্তি করে রেখে দিতে হয়।
গোলমরিচের লতা বাঁশের মধ্যে বেড়ে উঠার 3-3½ মাসে কাটিং তৈরী করার জন্য প্রথম লতা নেওয়া যাবে এবং পরবর্তী 2-2% মাস পরপর কাটিং তৈরীর জন্য লতা নেওয়া যাবে।
প্রতিটি শিকড় যুক্ত লতা থেকে ১০ টি কাটিং প্রতিবারে পাওয়া যায় এবং ৪০টি কাটিং এক বৎসরে পাওয়া যায়। ৬ মি x ২৪ মিঃ শেড এ ৬০০ অর্দ্ধেক করে কাটা বাঁশ বসানো যেতে পারে এবং বৎসরে গড়ে ২০,০০০ কাটিং তৈরী করা সম্ভব হবে এই পদ্ধতিতে।
এই পদ্ধতি সুবিধাজনক এবং কম সময়ে অধিক সংখ্যায় শিকড়যুক্ত কাটিং তৈরী করা সম্ভব।

৩। সর্পিল পদ্ধতি বা Serpentine Method: গোলমরিচের জন্য সবচেয়ে ভাল প্রপাগেশান টেকনিক বা বিস্তার পদ্ধতি হচ্ছে সর্পিল পদ্ধতি বা Serpentine Method.
৩ গাঁটযুক্ত গোলমরিচ কাটিং পলিথিন ব্যাগে লাগিয়ে নার্সারীর কোনায় রাখা হয়। যখন কাটিং এ দুটি পাতা দেখা যায় তখন লতাটাকে পটিং মিক্সচার ভর্তি পলিথিন ব্যাগের উপর দিয়ে এমনভাবে নিয়ে যেতে হয় যাতে প্রতিটি গাঁটের নিচে একটি করে পলিথিন ব্যাগ থাকে। প্রতিটি গাঁটকে চাপ দিয়ে পলিথিন ব্যাগ ভর্তি পটিং মিক্সচারের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হয়। নারকেল পাতার সলা 'V' এর মত করে ভেঙ্গে নিয়ে 
গাঁটযুক্ত লতার কিছুটা অংশ পলিথিন ব্যাগের মাটির ভিতর ঢুকিয়ে দিতে হবে যাতে সহজে শিকড় ছাড়তে পারে। একবার ২০ টি গাঁট থেকে শিকড় বেরোনোর পর প্রথম ১০ টি পলিথিন ব্যাগ যাতে শিকড় গজিয়েছে বেছে নিয়ে দুটি গাঁটের মধ্যবর্তী অংশে কেটে আলাদা করে নিতে হবে।
গাঁটের মধ্যবর্তী অংশ যেখান থেকে শিকড়যুক্ত কাটিং কেটে সরানো হয়েছে ঐ অংশটুকু পটিং মিক্সচারের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে। যাতে করে পুনরায় ঐ অংশে শিকড় গজায়। রোজ জলসেচ দিতে হবে। ৩ মাস পর কাটিং মূলজমিতে লাগানোর উপযুক্ত হবে। প্রতিটি মাদার কাটিং থেকে এই পদ্ধতিতে গড়ে ৬০ টি কাটিং পাওয়া যায়।
এই পদ্ধতি সহজ, স্বল্প খরচ সম্পন্ন এবং দ্রুত। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী, এই পদ্ধতিতে গোলমরিচ চারা তৈরী করতে পারে।
গোলমরিচের কাটিং বা চারা তৈরীর জন্য ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস উপযুক্ত সময়। চারা তৈরীর জন্য ভূমি শাখা ব্যবহার করা হয়। যে শাখাগুলো থেকে কাটিং নেওয়া হবে সেগুলো যেন বেশী নরম বা বেশী শক্ত না হয়। দুই তিন গাঁট যুক্ত শাখা কেটে নিয়ে পাতা ফেলে দিতে হবে। শুধু পাতার ছোট বোঁটা টুকরো শাখায় লাগানো থাকবেও প্রতিটি কাটিং এর উপরের দিকে একটি পাতা থাকবে। ছায়া আছে এমন জায়গায় আলাদাভাবে ছাউনী তৈরী করতে হবে। ৩০ x ১৫ সেমি মাপের পলিব্যাগ জমির উপরের স্তরের তিনভাগ মাটি, ১ ভাগ বালি ও ১ ভাগ গোবর / আবর্জনা সার মিশিয়ে ভর্তি করতে হবে। মাটি ভর্তি পলিব্যাগ কাটিং লাগাবার পর যেন জল না দাঁড়ায় তার জন্য পলিব্যাগের চারিদিক ১৫-২০ টা ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে। কাটিংগুলো এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে একটি গাঁট অবধি মাটির ভিতর ঢুকে থাকে। নার্সারীতে পলিব্যাগের মাটিতে যাতে উপযুক্ত তস থাকে তারজন্য নিয়মিত জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে। মে-জুন মাসের মধ্যে চারাগুলো মূল জমিতে লাগানোর উপযুক্ত হয়ে থাকে।

জাত (variety) : উন্নত জাতগুলির SREEKARA POURNAMI PANCHAMI SUBHAKARA
মধ্যে, পান্নিষুর-১, পান্নিয়ুর-২, পান্নিয়ুর-৩, পান্নিয়ুর-৪, পান্নিয়ূর-৫, REEKARA POURNAMI PANCHAMI SUBHAKARA পান্নিয়ুর-৬, শ্রীকারা, শুভকারা, পৌণমী, পঞ্চমী ইত্যাদি।

মূলজমিতে চারা রোপণ: (Planting)
• গোলমরিচের কাটিং লাগানোর জন্য মৌসুমি বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে আশ্রয়দান কারী গাছের গোড়া থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে উত্তর দিকে ৫০x৫০×৫০ সে.মি. মাপের গর্ত করে মাটির উপরের স্তরের মাটি (Topsoil), গোবর বা আবর্জনা সার ৫ কেজি প্রতি গর্ত, ১৫০ গ্রাম রক ফসফেট, নীমকেক ১ কেজি এবং ট্রাইকোডার্মা হারজিয়ানাম (Trichoderma harzianum) ৫০ গ্রাম ভালভাবে মিশিয়ে প্রতি গর্তে দিতে হবে চারা লাগানোর সময়।
প্রতি গর্তে দুইটি করে শিকরযুক্ত কাটিং আশ্রয়দানকারী গাছের উত্তর দিকে আলাদা আলাদা করে লাগাতে হবে এমনভাবে যাতে কাটিং এর অন্তত একটি গাঁট মাটির নীচে যায়। গাছের গোড়ায় যাতে জল না দাঁড়ায় তাই গর্তের মাটি যেন উঁচু ঢিবির মত থাকে। নূতন কাটিং লাগাবার পর প্রথম দিকে কৃত্রিম ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে প্রখর সূর্যকিরণ থেকে ছোট চারাগুলোকে বাঁচানোর জন্য।
Training (গোলমরিচ গাছকে সুনির্দিষ্ট আকার দেওয়া): প্রদর্শক শাখা Leader shoots উৎপাদনের জন্যে গোলমরিচের লতাকে লাগানোর প্রথম বর্ষে মাটিতে নামিয়ে আনতে হয়। ১ মিটারের মত উচ্চতায় পৌঁছলে পাতা সরিয়ে দিতে হয় এবং নামিয়ে এনে নীচের অংশের ৩/৪ অংশ মাটিতে পুতে দিতে হয়, আশ্রয়দানকারী গাছের চতুর্দিকে এবং উপরের স্তরের মাটি (Topsoil) দিয়ে ভালভাবে ঢেকে দিতে হয়। যা ভাল শিকড় গজানোতে এবং বেশী পরিমাণে Leader shoots উৎপাদনে সাহায্য করে। ৩-৫টি।eader Shoots প্রচুর পরিমাণে পার্শ্ব শাখা (Leterals) উৎপাদনে যথেষ্ট এবং তাতে করে আশ্রয়দানকারী গোলমরিচের কান্ড থেকেও শাখা প্রশাখা গজায় যা ফলন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

Mulching (আচ্ছাদন): গোলমরিচ গাছের গোড়ায় ১ মিটার ব্যাসার্দ্ধে সবুজ পাতা ১০ কেজি প্রতি গোলমরিচের লতায় মৌসুমী বৃষ্টির শেষে দেওয়া ভাল। মাটিতে তস থাকবে এবং সবুজ পাতা পচে গিয়ে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করবে।

Irrigation (জলসেচ): প্রতি গোলমরিচের লতায় গরমের সময় ১০০ লিটার জল প্রতি সপ্তাহে অন্তঃত একবার দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

• ব্লসমিং (ফুল ফোটার সময়), স্পাইকিং (গোলমরিচের ছড়া), স্পাইক ইলংগেশান (গোলমরিচের ছড়ার বৃদ্ধি), সেটিং (গোলমরিচ ফুল থেকে ফল হওয়ার সময়) এই সময়গুলো গোলমরিচ চাষের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়।

• গ্রীষ্মের পরবর্তী ১৬ সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় গোলমরিচ চাষের ক্ষেত্রে। এই সময়টুকুতে Shoot Growth (গোলমরিচের লতার বৃদ্ধি), Flower bud differentiation (গোলমরিচের ফল আসার প্রাক মুহূর্ত অর্থাৎ ফুলের কুঁড়ি আসার সময়টুকু), Spike emergence (গোলমরিচের ছড়া বেরুনো), Flower opening (ফুল ফোটার সময়টুকু), Berry formation & developing (গোলমরিচ ধরা এবং পুষ্ট হওয়া) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো চলতে থাকে। এই সময় জলসেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

• গোলমরিচের ছড়ার বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় যদি খুব ভাল Summer shower (গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টির) পর খুব লম্বা সময় ব্যাপী অনাবৃষ্টি চলতে থাকে।

• মে-জুন মাসের বৃষ্টিপাতের সাথে গোলমরিচের বেরি সেটিং বা গোলমরিচ ধরা ভীষণভাবে সম্পর্কযুক্ত।

• গ্রীষ্মকালে ১০০ লিটার জল প্রতি ভাইন বা লতায় প্রতি সপ্তাহে সুপারিশ করা হয়। লতার গোড়ায় ৭৫ সেমি ব্যাসার্ধে সরু নালা কেটে জল দেওয়া হয়।

•ড্রিপ ইরিগেশান অক্টোবর থেকে মে মাস অবধি (৭ লিটার জল প্রতিদিনে) সুপারিশ করা হয়।

আগাছা দমন (Weeding)
আশ্রয়দানকারী গাছের এবং গোলমরিচ লতার গোড়ায় ১ মিটার দূরত্বে বৎসরে দুইবার মাটি খুঁড়ে দিতে হয়। একবার দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টির শুরুতে আরেকবার মৌসুমী বৃষ্টির শেষে। এতে আগাছা অনেক কম হবে এবং মাটিতে তস থাকবে।
সারপ্রয়োগ (Manuring): গোলমরিচ লাগানোর প্রথমবর্ষে ১/৩ ভাগ সার, দ্বিতীয় বর্ষে ২/৩ ভাগ এবং তৃতীয় বর্ষ থেকে পুরোমাত্রায় সার প্রয়োগ করা দরকার। সারের পরিমাণ দুই ভাগে ভাগ করে ১ ভাগ দিতে হবে মে-জুন মাসে বাকী অর্দ্ধেক সার দিতে হবে সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে। সার দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় জলসেচ অবশ্যই দিতে হবে। সার গাছ থেকে অন্ততঃ ৩০ সেন্টিমিটার দূরে অবশ্যই দিতে হবে এবং পুরো মাটির স্তর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। লতার গোড়া যেন সারের সংস্পর্শে না আসে এটা লক্ষ্য রাখতে হবে। FYIM অথবা কম্পোষ্ট ১০ কেজি প্রতি ভাইন এবং নীম কেক ১ কেজি প্রতি ভাইন (Vine) মে-জুন মাসে দিতে হবে। প্রথম বর্ষে সার প্রয়োগ করতে হবে (হেক্টার প্রতি) ইউরিয়া ৭০ কেজি, ফসফেট ৫০ কেজি, মিউরিয়েট অব পটাস ৯০ কেজি, দ্বিতীয় বর্ষে, ১৪৫ কেজি ইউরিয়া, ৯৫ কেজি রক ফসফেট, ৬০ কেজি পটাশ, তৃতীয় বর্ষে ২০০ কেজি ইউরিয়া, ১৪৪ কেজি রক ফসফেট, ২৪০ কেজি পটাস, ২০ বৎসর অবধি এই মাত্রায় সার ব্যবহার করা দরকার।
Harvesting (ফসল তোলা): গোলমরিচ ফসল তোলার জন্য ফুল আসার সময় থেকে ৭-৮ মাস সময় লাগে। ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসে ফসল তোলা হয়। ভাল রং সম্পন্ন এবং দেখতে ভাল গোলমরিচ পেতে হলে সঠিক সময়ে সবুজ গোলমরিচ আহরণ করতে হবে। যখন ছড়ার মধ্যে একটি বা দুটি গোলমরিচ লাল অথবা হলুদ বর্ণ ধারণ করে তখন গোলমরিচের ছড়া, হাতে ভেঙ্গে নিয়ে থলের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়। যদি গোলমরিচ বেশী পরিপক্ক হয় তাহলে গোলমরিচ ঝরে নিচে পড়ে যায় বা পাখীতে নষ্ট করে এবং যার ফলে অত্যধিক ক্ষতি হয় ফলনে। বর্তমানে Production Diversification এর জন্য বিভিন্ন পরিপক্ক দশায় Maturity Stage এ গোলমরিচের ফসল তোলা হয় (Harvest)!

Post Harvest Processing: (ফসল তোলার পর ক্রিয়াকরণ) 
Threshing (গোলমরিচ স্পাইক থেকে ছাড়ানো):
• সাধারণত হাত দিয়ে ছড়া থেকে গোলমরিচ ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এতে করে গোলমরিচের সাথে কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিস মিশে যেতে পারে। তাই এখন বড় বাগিচার ক্ষেত্রে Mechanical Thresher যা প্রতি ঘন্টায় ৫০ কেজি থেকে ১২০ কেজি অবধি গোলমরিচ স্পাইক থেকে ছাড়াতে পারে এবং খুব দ্রুত পরিষ্কার গোলমরিচ আমরা পেতে পারি।

Blanching (সিদ্ধ করা): ফুটন্ত গরমজলে পরিপক্ক গোল মরিচ ১ মিনিটের মত সময় ডুবিয়ে জল ঝরিয়ে নিয়ে শুকিয়ে নিতে হয়।
• এতে করে একই রকম কালো রং-এর গোলমরিচ পাওয়া যায় শুকানোর পর।
• রোগজীবাণু যদি কিছু গোলমরিচে থাকে এগুলে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।
• ৩-৪ দিনেই গোলমরিচ শুকানোর কাজ শেষ হয়।
• কোন অবাঞ্ছিত জিনিষ গোলমরিচে থাকলে এগুলো তাতে সরে যায়।
• বেশী দিন সংরক্ষণ করা যায়।

Drying (শুকানো): সবুজ গোলমরিচ যখন Harvest করা হয় তখন ৬০%-৭০% জল থাকে এর মধ্যে। সঠিকভাবে শুকিয়ে জলের পরিমাণ ১০% এর নীচে নিয়ে আসতে হবে। শুকানোর সময় Enzymatic browning চলতে থাকে। বায়ুর অক্সিজেনের সংস্পর্শে Phenolase Enzyme এর উপস্থিতিতে ফেনলিক যৌগ (Phenolic Compounds) গুলো Oxidised (জারিত) হয় এবং গোলমরিচ কালো বর্ণ ধারণ করে। Sundrying হচ্ছে Conventional method, ৩-৫ দিন রৌদ্রে শুকালে জলের পরিমাণ ১০% শতাংশের নীচে আসে। যদি জলের পরিমাণ বেশী থাকে তাহলে গোলমরিচ ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং মনুষ্য ব্যবহারের অনুপযোগী হয়।

গুদামজাতকরণ (Storage): গোলমরিচ Hygorscopic Nature-এর, যার ফলে বৃষ্টির মরসুমে Mould এবং পোকার আক্রমণ হয়। এইজন্য গোদামজাত করার আগে ১০% শতাংশের নীচে জলীয় ভাগ নামিয়ে আনতে হবে এবং বহু আস্তরণবিশিষ্ট কাগজের ব্যাগ (Multi layer paper bags) অথবা woven polypropylene bags যার মধ্যে Food grade liners থাকে তা দিয়ে Export এর জন্য Pack করা হয়। অথবা Jute Bag-এ Pack করা হয়।

রোগ, পোকা ও প্রতিকারের ব্যবস্থাপনাঃ
Phytophthora footrof (গোড়া পচা রোগ): গোলমরিচের খুব ক্ষতিকারক রোগ এটি। Phytophthora Capsici নামক ছত্রাক গোলমরিচের লতার সমস্ত অংশেই আক্রমণ করে। কচি পাতায় গাঢ় দাগ পড়ে। আঁশ সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে এবং খুব দ্রুত পাতা ঝড়ে পড়ে। ধাবক শাখা (Runner Shoots) তে আক্রমণ হলে তা গাছের গোড়ায় পৌঁছে এবং হঠাৎ ঢলে পড়ে। পাতা ঝরে যায় এবং গোলমরিচের ছড়া ঝরে যায়।

জৈবিক নিয়ন্ত্রণ (Biological Control): আক্রান্ত অংশ কেটে বাদ দেওয়া, ছায়া নিয়ন্ত্রণ করা Antagonistic micro organism যেমন Trichoderma harzianum, Pseudomonas fluorescense, মৌসুমি বৃষ্টির শুরুতে May মাসে 50 gm/vine Trichoderma দিতে হবে এবং August Sept. মাসে 50 gm / vine. Pseudomonas fluorescens দিতে হবে।

রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ (Chemical Control):
• সমস্ত গোল মরিচের লতায় Copper Oxichloride@2% (5-10 litres/vine) drench করা দরকার।

• ঐ সময়েই 1% Bordeaux mixture Foliar spray হিসাবে ব্যবহার করা দরকার। May-

June এবং August Sept. মাসে তার পুনরাবৃত্তি করা দরকার।

• যদি Monsoon লম্বা হয় তাহলে October মাসে 3rd round drenching করা দরকার।

• কিছুদিন বৃষ্টির পর গোল মরিচের লতা 0. 125% Metalaxyl Mancozeb@5-10 lit/vine দিয়ে Drench করে দিতে হবে। Foliar spray 0.125% Metalaxyl & Mancozeb ব্যবহার করতে হবে।

পোকা দমনঃ ত্রিপুরাতে পলু বিটল পোকার দ্বারা গোলমরিচের গাছ আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কুইনালফস / থায়োডিন ২ মিলি লিটার প্রতি লিটার জলে গুলে June-July মাসে একবার এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আর একবার স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ রোধ করে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ