Advertisement

Responsive Advertisement

সকলকে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার: মুখ্যমন্ত্রী


আগরতলা, ১৫ ফেব্রুয়ারি: রাজ্যের সকল অংশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে চালু হল চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা (CM-JAY)। এই স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে রাজ্যের ৪.১৫ লক্ষ পরিবারকে প্রতি বছরে ৫ লক্ষ টাকার বীমা কভারেজ প্রদান করা।
            এদিন আগরতলার নেতাজি সুভাষ বিদ্যানিকেতনে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি দিনটি আবারো ত্রিপুরার আপামর জনগনের জন্য ঐতিহাসিক হয়ে থাকলো। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, এই শুভ উদ্যোগ ত্রিপুরার জনগণের জন্য ডাবল ইঞ্জিন সরকারের একটি উপহার। যারা আয়ুষ্মান ভারত বা অন্য কোন সরকারি বীমা প্রকল্পের আওতায় আসেন নি তারা মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা থেকে ব্যাপক উপকৃত হবেন। স্বাস্থ্য পরিষেবাকে এখন সবার কাছে সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী করে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা হচ্ছে প্রত্যেকের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার গ্যারান্টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এরফলে সুবিধাভোগীরা বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা পাবেন।
                     মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সমস্ত জনগণের কাছে স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবার সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে আমাদের রাজ্যেও ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার সূচনা হয়েছিল। আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় দেশের অনেক সুবিধাভোগী উপকৃত হচ্ছেন। রাজ্যের প্রায় ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫ লক্ষ ১২ হাজার পরিবার এই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৯৪ হাজারেরও বেশী সুবিধাভোগী আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনাটি আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আদলে করা হয়েছে। শুধুমাত্র কার্ডের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় রাজ্যের যেসমস্ত পরিবার স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবার সুযোগ পাননি এমন প্রায় ৪ লক্ষ ১২ হাজার পরিবারকে চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনার আওতায় আনা হবে।
                      অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগ আক্রান্ত মানুষ তার রোগের পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করতে গিয়ে অসহায়বোধ করেন। রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের এই অসহায়তার কথা বিবেচনা করে এই প্রকল্পটি গ্রহন করেছে। প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হল রাজ্যের প্রত্যেক নাগরিককে চিকিৎসা বিষয়ে সুরক্ষা প্রদান করা। রাজ্যে যেসমস্ত সুবিধাভোগী আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা, বিল্ডিং এন্ড আদার কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী ন্যায় মহা অভিযান প্রকল্পে অথবা অন্য কোন সরকারি বীমা প্রকল্পের আওতাভুক্ত নন, সেই সমস্ত নাগরিকগণ চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা ২০২৩ এর অধীনে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এই প্রকল্পে সুবিধাভোগীরা রাজ্যের এবং বহিরাজ্যের সমস্ত তালিকাভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অন্তর্বিভাগের চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এই প্রকল্পে হাসপাতাল থেকে ছুটির পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত ওষুধপত্রর ব্যবস্থা করা হবে। রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি কর্মচারিরাও এই যোজনার আওতায় আসতে পারবেন। তবে তাদেরকে মেডিক্যাল অ্যালাউন্স এবং মেডিক্যাল রি- এমবার্সমেন্ট সারেন্ডার করতে হবে। 
                  অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে সরকারের নিরন্তর প্রয়াস জারি রয়েছে। রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নে সম্প্রতি ডোনার মন্ত্রক ৫টি প্রকল্পে মোট ৭১৭ কোটি টাকার মঞ্জুরি দিয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠোমার উন্নয়নে ৩টি প্রকল্প রয়েছে। আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং জিবিপি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৭২৭ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১৪১৩ করা হয়েছে। জি বি পি হাসপাতালে নবনির্মিত সুপার স্পেশালিটি ব্লকের উদ্বোধন করা হয়েছে। কার্ডিওলজি, সি টি ভি এস, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, প্লাস্টিক সার্জারি এবং নিউরো সার্জারি মতো সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু করা হয়েছে। একই সাথে নতুন সংস্কারকৃত শিশু ওয়ার্ড ও পি আই সি ইউ-র, জেরিয়াট্রিক ওয়ার্ড, সম্প্রসারিত ডায়ালিসিস ইউনিট এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড-২ এর উদ্বোধনও করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যেই যাতে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট ও থ্যারাপি চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করা যায় তার জন্য চিকিৎসক ও নার্সিং কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 
           অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, উন্নয়নের সাথে জড়িয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম। প্রধানমন্ত্রী অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়ন বিশেষ করে ত্রিপুরাকে হীরা মডেল উপহার দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এনইসি বৈঠকে রাজ্যে আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে রাজ্যে প্রায় এইমসের মতো একটি হাসপাতাল গড়ার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের চিত্র তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন।  
                 অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায়, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, বিশিষ্ট সমাজসেবী রাজীব ভট্টাচার্য্য, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, ভারত সরকারের ন্যাশনাল হেলথ অথরিটির অ্যাডিশন্যাল সিইও ড. বসন্ত গর্গ, স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যে, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ত্রিপুরা শাখার অধিকর্তা ডি কে চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ সুবিধাভোগীদের মধ্যে চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনার কার্ড তুলে দেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ