আগরতলা, ২৩ ডিসেম্বর : আগরতলায় শুরু হয়েছে দুই দিন ব্যাপি ভারতীয় ধ্রুপতি সঙ্গীত ও উৎসব। শনিবার রাজধানীর মুক্তধারা অডিটরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা মানিক সাহা। অনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা ভারতে বৈদিক যুগ হতে চলে আসছে। প্রায় ২হাজার বছরের পুরোনো এই চর্চা। মূলতঃ মন্দিরে পরিবেশিত স্ত্রোত্র হতেই সৃষ্টি হয়েছে। সাম বেদে সঙ্গীতকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত বিষয় হিসেবে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রধান দু'টি ধারা বিদ্যমান। এগুলি হলো হিন্দুস্থানী সঙ্গীত বা হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এবং কর্ণাটকী সঙ্গীত। হিন্দুস্থানী ও কর্ণাটকী সঙ্গীতের কিছু কাঠমোগত বৈশিষ্ট্য ও রীতি রয়েছে। উভয় ধরণের সঙ্গীতেই রয়েছে দু'টি মৌলিক উপাদান যা তাল ও রাগ হিসেবে পরিচিত। রাগ সাতটি সুর এবং ২২টি শ্রুতির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা হয় মূলতঃ দুই ভাবে, কন্ঠে ও বাদ্যযন্ত্রে পরিবেশন করা হয়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একক ভাবে পরিবেশনকারী যন্ত্রসমূহ হচ্ছে সরোদ, সেতার, সুর-বাহার, বীণা, সারেঙ্গী, বাঁশী, হারমোনিয়াম, বেহালা, সন্তুর, তবলা, মৃদঙ্গ। এছাড়াও সহায়ক যন্ত্রসমূহ হচ্ছে তানপুরা, এস্রাজ, পাখোয়াজ ইত্যাদি। হিন্দুস্থানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রচলন মূলত উত্তর ভারতে এবং কর্ণাটকীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত মূলত দক্ষিণ ভারতে দেখা যায়।
আরো বলেন রাজ্যেও রাজন্য আমল থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা চালু রয়েছে। রাজসভা কেন্দ্রিক গুণিজনদের সমাবেশ অতীত ত্রিপুরার সংস্কৃতির জগতের ধারাকে সমৃদ্ধতর করেছিল। বিশেষ করে ধ্রুপদী শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত ও চিত্রকলার অনবদ্য ক্ষেত্র হিসাবে গড়ে উঠে ত্রিপুরা। মাণিক্য উপাধিতে ভূষিত ত্রিপুরার প্রথম মাণিক্য রাজা রত্নমানিক্যের আমলেই বৃহত্তর হিন্দু সংস্কৃতির ঘনিষ্ট যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার কথা জানা যায়। মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুরের আমল থেকেই ত্রিপুরার সংস্কৃতি চর্চার একটা বলিষ্ঠ রূপরেখা পাওয়া যায় বলেও মত ব্যক্ত করেন। মহারাজা বীরচন্দ্র নিজেও কবি,শিল্পী ও শিল্পের অসাধারণ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। যদুভট্ট, কাশেম আলি খাঁ, কুলন্দর বক্স, হায়দর খাঁ, নিসার হুসেন, পঞ্চানন মিত্র, ক্ষেত্রমোহন বসু, কেশব চন্দ্র মিত্র, রাম কুমার বসাক, প্রতাপ মুখোপাধ্যায়, মদনমোহন মিত্র, শরৎ বাই, চাদা বাঈজি, ভোলানাথ চক্রবর্তী, সাধু তবলচি, আহম্মদ খাঁ প্রমুখ সঙ্গীত ও সংস্কৃতি জগতের দিকপালগণ মহারাজা বীরচন্দ্রের সময়ে ত্রিপুরার রাজসভাকে সমৃদ্ধ করেছেন। মহারাজা বীরচন্দ্রের সময় থেকে মহারাজা বীরবিক্রমের সময়েও ভারত বিখ্যাত বহু গুণীশিল্পীর সমাবেশ ঘটেছিল। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, মাজিদ খাঁ, আদম বক্স মুন্না খাঁ, ঠাকুর অনিলকৃষ্ণ দেববর্মন এদের উজ্জল উপস্থিতির কথা উল্লেখ রয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাজসভা কেন্দ্রিক শিল্প সংস্কৃতির প্রবাহ রাজ অন্দরের বাইরেও প্রবাহিত হতে থাকে সেই সময়কাল থেকে। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার সম্পর্ক সকলেরই জানা। রাজ পরিবারের বহু গুণীশিল্পীও ত্রিপুরার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও শিল্প সংস্কৃতির ক্ষেত্রটিকে সমৃদ্ধ করেছেন ।
সংস্কৃতি আমাদের নিজস্ব সত্বার প্রকাশ ঘটায়। দেশের নানা প্রান্তে নানা সংস্কৃতি ছড়িয়ে রয়েছে । যুব সমাজের মধ্যে সেই সংস্কৃতিকে বিকশিত করার জন্য এধরণের উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবী তাপস ভট্টাচাৰ্যও।
দুদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিশিষ্ট সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এসেছেন। অনুষ্ঠান শেষ হবে রবিবার।
0 মন্তব্যসমূহ