আগরতলা, ২৪সেপ্টেম্বর: ত্রিপুরা সরকারের বায়োটেকনোলজি দপ্তরের উদ্যোগে এবং আশ্রয় ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তার খোয়াইর তুলশিখর ব্লকের বেহালাবাড়িকে বায়োভিলেজ ২.০ হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এই উপলক্ষে বুধবার এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের বন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা। বেহালাবাড়ি পঞ্চায়েত হলে এক আরম্ভরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রকল্পের উদ্ভোধন করা হয়। মন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন আশ্রয় ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা নলিনীকুমার, জেনিল ধারানি, কানারা এইচ, এস, বি, সি ব্যাঙ্কের সি এস আর ইনচার্জ, বায়োটেকনোলজি দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা তথা এই বায়ো ভিলেজ ২.০ প্রজেক্টের পুরোধা অঞ্জন সেনগুপ্ত ও অন্যন্য আধিকারিকগণ। এই উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা আশ্রয় ফাউন্ডেশনের এই উদ্যুগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে ডিরেক্টরেট অব বিয়োটেকনোলোজির ও প্রশংসা করেন এবং বলেন, আজ রাজ্যের বাইরের একটি সংস্থা বায়ো ভিলেজ ২.০ এর জন্য যে বিনিয়োগ করছে তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বায়োটেকনোলজি দপ্তরের। আর এই প্রকল্প এই দপ্তরের আধিকারিকের মস্তিষ্ক প্রসূত যা আজ সারা দেশে সমাদৃত।
বেহালাবাড়ির মোট ৫৬ জন সুবিধাভোগীকে এই প্রকল্পের আওতাধীন আনা হয়েছে। বায়ো ভিলেজের নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে গ্রামের প্রাকৃতিক সম্পদের বিশ্লেষণ ও সুবিধাভোগীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ৩ থেকে ৫ টি উপাদান নির্বাচন করতে পারে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ। এক্ষেত্রে সুবিধাভোগীদের হাতে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী বৈদ্যুতিক উপাদান ছাড়াও জৈব সার , ব্যাটারিচালিত স্প্রে মেশিন , বায়োমাস কোকষ্টভ , বায়ো গ্যাস , মাশরুম চাষের উপকরণ, মৌমাছি প্রতিপালনের উপকরণ , হাঁস , মুরগি, ছাগল, শূকর ছানা, মাছের পোনা , প্রাণী ও মৎস্য খাদ্য, ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হয়।
একটা সময় ছিল যখন বায়ো ভিলেজ ২.০ প্রকল্পটির কথা শুধু মুষ্ঠিমেয় কিছু গ্রামের কয়েকজন সুবিধাভোগীর কাছে পরিচিত ছিল। বায়োটেকনোলজি দপ্তরের আধিকারিকদের সাথে কথা হচ্ছিলো যার মস্তিষ্ক প্রসূত এই প্রকল্প। রাজ্যের ও,এন,জি,সি, এর আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্পের পথ চলা শুরু। তারপর এক দুই করে বর্তমানে ৩০টি গ্রামে এর ব্যপ্তি ঘটেছে। এমন কি এর উদ্ভাবনী ভাবনাটা প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসাও কুড়িয়েছে। তারপর ২০২৩ এ স্কচ সিলভার আওয়ার্ডে সম্মানিত এবং ২০২৫এ নীতি আয়োগের বেস্ট প্রাকটিস হিসেবে বিবেচিত। আর ২০২৫ এর এই সময়ে আহমেদাবাদস্থিত আশ্রয় ফাউন্ডেশন নামক একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কানাড়া - এইচ এস বি সি ব্যাঙ্ক'র আর্থিক সহায়তায় প্রথম বহিঃরাজ্যের কোন সংস্থা হিসেবে রাজ্যের নিজস্ব একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নিয়েছে।
নীতি আয়োগ দ্বারা প্রকাশিত এই বিষয়টি গুজরাটের আহমেদাবাদস্থিত একটি বেসরকারী সংস্থার নজরে আসে এবং প্রকল্পটির অভিনবত্ব এর বাস্তবায়নে উৎসাহিত করে এবং তার পরবর্তীতে ডিরেক্টরেট অফ বায়োটেকনোলজির সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ত্রিপুরাতে আশ্রয় ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং বায়োটেকনোলজি দপ্তরের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এটি রূপায়ণের কাজ হাতের নেয় খোয়াইয়ের বেহালাবাড়ি ভিলেজে। আশ্রয় ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় কানাড়া - এইচ এস বি সি লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আশ্রয় ফাউন্ডেশন ভারতের একটি শীর্ষ সন্মানীয় ও লাভজনক সংস্থা, যা গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগুষ্ঠির ক্ষমতায়নের জন্য নিবেদিত। দেশের ৯ টি রাজ্যে ১০০টি জেলায় এর কর্মবিস্তৃতি রয়েছে। খোয়াইর তুলশিখর ব্লকের বেহালাবাড়ি বায়োভিলেজ ২.০ প্রতিলিপি মূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এদের প্রকল্প পরিবেশের অন্তর্গত। রাজ্যের বায়োটেকনোলজি দপ্তরের সহযোগিতায় আশ্রয় ফাউন্ডেশনের বায়োভিলেজ প্রকল্পের প্রতিলিপি নির্ভর বাস্তবায়ন অবশ্যই রাজ্যের প্রথম বিনিয়োগমূলক আর্থসামাজিক প্রকল্প। এক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজি দপ্তর এই কৃতিত্বের দাবি রাখে।
0 মন্তব্যসমূহ