আগরতলা, ২৮ অক্টোবর : রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম (RBSK)-এর হাত ধরে ত্রিপুরার ধলাই জেলার ছোট্ট রেশমিকা মগ জন্মগত হৃদরোগ (Congenital Heart Disease) জয় করে এক নতুন জীবন পেয়েছে। এই সাফল্য কেবল রেশমিকার নয়, বরং স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে সরকারের দায়বদ্ধতা এবং সঠিক সময়ে পদক্ষেপের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কুলাইয়ের নবগ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় মগ এবং তাঁর পরিবার জানতেন না যে তাঁদের ছোট্ট রেশমিকার জীবনে লুকিয়ে আছে এক বড়ো বিপদ। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্ক চোখ ঠিক তা খুঁজে বের করল।
১৪ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে, আমবাসার RBSK টিম একটি নিয়মিত ভিজিটে এসে রেশমিকার মধ্যে জন্মগত হৃদরোগের (CHD) প্রাথমিক লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে। এই সময়োপযোগী শনাক্তকরণ ছিল এই সফলতার প্রথম ধাপ। যদি আর.বি.এস.কে টিম না আসত, তবে হয়তো অনেক দেরিতে এই রোগ ধরা পড়ত, যা রেশমিকার জীবনকে আরও সংকটের মুখে ঠেলে দিত।
প্রাথমিক স্ক্রিনিং-এর পর, আর.বি.এস.কে-এর তত্ত্বাবধানে রেশমিকাকে দ্রুত আগরতলার আইজিএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ১৫ই মার্চ,২০২৩ তারিখে তার ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়। রিপোর্ট নিশ্চিত করে যে তার হৃদযন্ত্রে জটিল ত্রুটি রয়েছে, যা তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছিল। এই ধরনের রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল, যা সঞ্জয় মগ-এর মতো সাধারণ এক পরিবারের পক্ষে অসম্ভব ছিল।
ঠিক এই কঠিন সময়েই ত্রাতার ভূমিকায় এগিয়ে আসে রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম। রাজ্যের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুরু হয় রেফারেলের প্রক্রিয়া। ২৫ই অগাস্ট,২০২৫ ইং তারিখে, তাকে দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ের বিশেষায়িত হাসপাতাল এপোলো চিলড্রেন'স হসপিটালে (Apollo Children's Hospital, Chennai) ভর্তি করা হয়।
বিশেষজ্ঞ কার্ডিয়াক সার্জনদের একটি দল রেশমিকার জটিল অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেন। ৩০ অগাস্ট,২০২৫ ইং হৃদযন্ত্রের ভেতরের অবস্থা স্পষ্ট বোঝার জন্য প্রথমে অরটোগ্রাম অস্ত্রোপচার করা হয়। ২রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ এরপর আসে সেই গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে জটিল 'বিডাইরেকশনাল গ্লেন-অ্যাট্রিয়াল সেপটেক্টমি' অস্ত্রোপচারটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
অস্ত্রোপচারের পর রেশমিকাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে হৃদরোগের সঙ্গে লড়াই করা এই শিশুটি অবশেষে এক সুস্থ জীবনের দিকে পা বাড়াতে থাকে। চিকিৎসক এবং নার্সদের পরিচর্যা এবং আর.বি.এস.কে টিমের নিয়মিত ফলো-আপ-এর ফলস্বরূপ, রেশমিকা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। অবশেষে, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে হাসপাতাল থেকে তাকে ছুটি দেওয়া হয়।
আজ রেশমিকা মগ নবগ্রামে তার বাড়িতে ফিরেছে। সে এখন অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো খেলতে পারে, দৌড়াতে পারে। সঞ্জয় মগ সজল চোখে জানান, "আমরা কখনও ভাবিনি যে আমাদের ছোট্ট মেয়েটিকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে আসতে পারব। RBSK টিম এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে আমাদের ভাষা নেই। ওরাই আমার মেয়েকে নতুন জীবন দিয়েছে।"
রেশমিকার এই সফল আরোগ্যগাথা প্রমাণ করে যে, সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসা পেলে দুর্গম এলাকার শিশুদেরও জটিল রোগ থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব।
0 মন্তব্যসমূহ