নামকরণ ও ইতিহাস
উত্তরাখণ্ড রাজ্যের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো রাজা জি ন্যাশনাল পার্ক। এই অভয়ারণ্যটির নামকরণ করা হয়েছে মহারাজা রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ জি-এর নামে, যিনি গঢ়ওয়াল অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী রাজা ছিলেন। তাঁর নামেই ১৯৮৩ সালে এই পার্কটির নামকরণ করা হয়। এর পূর্বনাম ছিল মোতিচূর অভয়ারণ্য, যা পরবর্তীতে রাজাজি ন্যাশনাল পার্কে রূপান্তরিত হয়।
অবস্থান ও আয়তন
রাজা জি ন্যাশনাল পার্কটি ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের তিনটি জেলায় বিস্তৃত: হরিদ্বার, দেরাদুন এবং পৌরি গঢ়ওয়াল। এই বিশাল পার্কটি মোট ৮২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি শিবালিক পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত এবং হিমালয়ের দক্ষিণ অংশে এক সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের আবাসভূমি গঠন করেছে।
উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি
রাজা জি পার্কে প্রধানত শাল গাছের বন দেখা যায়। এছাড়া এখানে আছে, টিক গাছ, অর্জুন, রোহিণী, বাঁশ, ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। এইসব উদ্ভিদের মাঝে গড়ে উঠেছে একটি ঘন ও জীবন্ত বনভূমি, যা বহু বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
প্রাণীকুল
রাজা জি ন্যাশনাল পার্ক বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে যেসব প্রাণী দেখা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম, এশিয়াটিক হাতি। এই পার্কে প্রায় ৫০০-র বেশি হাতি আছে। বাঘ, চিতা, চিতল হরিণ, সংবার, বুনো শুকর, লেপার্ড, ভালুক, শেয়াল ও হায়েনা।
এছাড়াও এখানে প্রায় ৩১৫ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য কিছু পাখির মধ্যে আছে হর্নবিল, কিংফিশার, ঈগল, প্যারাকিট এবং পিকক।
পর্যটনের উপযুক্ত সময়
রাজা জি ন্যাশনাল পার্ক সাধারণত প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। বর্ষাকাল (জুলাই থেকে অক্টোবর) বন্ধ থাকে, কারণ তখন এখানে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয় এবং রাস্তা কাদাযুক্ত ও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় কার্যক্রম
জিপ সাফারি – পর্যটকরা জিপে করে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ঘুরে বন্যপ্রাণী দেখার সুযোগ পান।
হাতির পিঠে চড়ে সাফারি, বার্ড ওয়াচিং, ট্রেকিং ও নেচার ওয়াক।
চিত্রায়িত বনবিভাগ মিউজিয়াম পরিদর্শন
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, নিসর্গের অপার সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের আধার হিসেবে রাজা জি ন্যাশনাল পার্ক নিঃসন্দেহে ভারতের অন্যতম সেরা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। যারা প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি এক চমৎকার গন্তব্য।
0 মন্তব্যসমূহ